অর্থনীতির উন্নয়নে ওয়াইপিএফ-এর নতুন জোট চালু

অর্থনীতির উন্নয়নে ওয়াইপিএফ-এর নতুন জোট চালু

অর্থনীতিঃ
কোয়ালিশন ফর আপগ্রেডিং বাংলাদেশ ইকোনমি” (CUBE – কিউব) শিরোনামে তরুণ সংগঠন ইয়ুথ পলিসি ফোরাম (ওয়াইপিএফ) একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে।

গত ২১তারিখ ঢাকার এমসিসিআই মিলনায়তনে এই বিষয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ মসিউর রহমান, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টেফান ডারকন, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরিয়েন্টাল স্কুলের অধ্যাপক মুশতাক খান, ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও জাভেদ আখতার এবং ওয়ালটনের সিইও গোলাম মুর্শেদ-এর মতন বিশেষজ্ঞ বক্তাসহ অন্যান্যরা।

বাংলাদেশের অর্থনীতির বহুমুখী উন্নয়নের জন্য যৌথ জোটের গুরুত্ব ও নানাবিধ প্রভাবের ব্যাপারে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সকল প্রতিনিধিরা উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা করেন।

আমরা এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের (4IR) দ্বারপ্রান্তে, যা কৃষি, ইলেকট্রনিক্স, স্বয়ংচালিত এবং ডিজিটাল অর্থনীতি খাতে বিপুল সুযোগ নিয়ে আসছে।

যদিও শ্রমের মূল্য এবং মজুরির দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান রয়েছে, তবে প্রাতিষ্ঠানিক গুণমান এবং ব্যবসায়িক সূচকের দিক থেকে আমাদের অবস্থান বর্তমানের সাথে একেবারেই বেমানান। আমাদের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় রপ্তানি বৈচিত্র্যেরও অভাব রয়েছে, যা আমাদের বিনিয়োগের পরিবেশকে সামনের দিকে আরও অনুকূল করে তোলার জন্য একটি অদৃশ্য চাপ সৃষ্টি করে।

এছাড়াও, প্রকৃত অগ্রগতির জন্য কর্তৃপক্ষের উচিত নির্দিষ্ট সমস্যা খুঁজে তা সমাধানের সঠিক নির্দেশনা দেওয়া।

স্বাগত বক্তব্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাভাটনিক স্কুল অফ গভর্নমেন্টের অর্থনৈতিক নীতির অধ্যাপক স্টেফান ডারকন বলেন, “আপগ্রেড করার অর্থ প্রযুক্তিগত অংশগুলি সন্ধান করা নয়, এটি অভিজাত এবং রাজনৈতিক অংশগুলিকেও আপগ্রেড করা।”

তিনি আরও যোগ করেছেন, “রাষ্ট্রের নিজস্ব সচেতনতা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আপনার রাষ্ট্র কোরিয়া, ভিয়েতনাম এবং চীনের চেয়ে আলাদা বিধায় তাই আপনার জানতে হবে কোথা থেকে শুরু করা উচিত। যেমন উদাহরণস্বরূপ আপনি প্রথমে মনোনিবেশ করতে পারেন স্বচ্ছতার দিকে।”

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সোয়াস/ওরিয়েন্টাল স্কুলের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. মুশতাক খান ব্যাখ্যা করেন যে “”রাষ্ট্রের আসল ব্যর্থতা হল শৃঙ্খলার ব্যর্থতা।” এর সাথে আরও যোগ করে, তিনি ব্যাখ্যা করেন – “আমাদের দেশে ক্ষমতার বণ্টনের পার্থক্যের কারণে আমরা দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীন থেকে শিখতে পারি না। আমাদের বাজারের মিশ্রণ এবং সমর্থনের উদ্ভাবনী ফর্মের উপর নির্ভর করতে হবে যা ক্যাপচার করা যায় না। দেশগুলোর মূল্য শৃঙ্খলে না যাওয়ার কারণ হল তাদের দক্ষ লোক নেই। শ্রমিক ও মেশিন এবং সাংগঠনিক উৎপাদনশীলতা কিভাবে সংগঠিত করা যায় তা জানা কঠিন।”

ইউনিলিভারের মতো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা কীভাবে আমাদের দেশীয় অর্থনীতির উন্নতিতে প্রভাব ফেলতে পারে? দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশ তাদের তৃতীয় বৃহত্তম কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে, এই সূত্র ধরে ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও জাভেদ আখতার এই ধরনের জোটের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন কারণ তাতে কাজগুলো আরো বৃহৎ পরিসরে করা যায়।

তিনি আরো বলেন যে কোনো বিনিয়োগকারীর জন্য বাংলাদেশ পরবর্তী গন্তব্য হওয়া উচিত যা আমাদের অর্থনীতির উন্নতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

দেশীয় অর্থনীতির উন্নতি সাধনে অর্থবহ ভূমিকা রাখার জন্যে ওয়ালটন কী পরামর্শ দেবে সবাইকে? ওয়ালটনের সিইও গোলাম মুর্শেদ বলেন, “আমরা যে বিশ্বব্যাপী পরিবর্তন করতে সক্ষম এই বিশ্বাস এবং মানসিকতা থাকতে হবে। নীতি প্রণয়নের সময় প্রধান শিল্পকারখানার সদস্যদের উপস্থিত থাকতে হবে।”

উক্ত আলোচনায় সমাপনী বক্তা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, “যেহেতু অর্থনীতির বিকাশ হবে, শ্রমিকরা উচ্চতর প্রণোদনা চাইবে, তাই আপনি খুব বেশি দিন সস্তা শ্রমের উপর নির্ভর করতে পারবেন না।

উদ্যোক্তারা যদি নতুন পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ নিতে না পারে, তবে এটি কঠিন হবে কারণ এই পরিবর্তনে অনেক কিছু অপ্রচলিত হয়ে যাবে। নতুন উদ্যোক্তারা অনেকই উচ্চশিক্ষিত, এবং তারা জানে তারা কী করতে চায়। তারা জোর দেয় আইনকে স্বচ্ছ করার জন্যে, এবং তারা আরও দক্ষতা অর্জন করতে চায়। প্রযুক্তি এবং মেশিন আমদানি করা যেতে পারে কিন্তু তাদের ব্যবহার করার জ্ঞান, প্রতিশ্রুতি এবং দক্ষতা এটির সাথে আসে না। এটি গড়ে তুলতে হবে।”

এর সাথে যোগ করে ড. মসিউর আরও বলেন, “একজন উদ্যোক্তাকে বিবেচনা করতে হবে যে তিনি একই শিল্পে কতদিন থাকবেন এবং কখন বের হবেন। তাদের সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকার শুধুমাত্র একটি শিল্প তৈরি করতে পারে। সুযোগের অফার যা তাদের অবশ্যই চিনতে হবে এবং অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।”

-শিশির

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter