ইকবালুর রহিম, নিরলস এক নেতা

আমিরুল ফয়সলঃ

দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনের বর্তমান সাংসদ ইকবালুর রহিম একেবারে মাঠ পর্যায় থেকে রাজনীতি করে শীর্ষে ওঠে আসা নিরলস একজন নেতা। ১৯৬৫ সালের ১৬ই আগষ্ট দিনাজপুর সদরের মুন্সিপাড়ায় জন্ম। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। পারিবারিক আবহের কারণে সেই ছোটবেলা থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে বড় হয়েছেন তিনি।

ইকবালুর রহিম দিনাজপুর জিলা স্কুল হতে মানবিক বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। স্কুল জীবনের প্রায় পুরোটা সময় স্কাউটস এর সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। শরীরচর্চা, এ্যক্রোবেটিকস এবং খেলাধুলায় বেশ দক্ষ ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইতিহাসে বি.এ (অনার্স) সহ এম. এ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৯২ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হোন। অনুর্ধ্ব ২৭ বছর বয়সে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তিনিই প্রথম সাধারণ সম্পাদক।

রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠার দরুণ ইকবালুর রহিম শৈশব হতে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের তিনি প্রথম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অভিষিক্ত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে তখনকার স্বৈরাচারী সরকার উৎখাত আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হোন। ইকবালুর রহিম ২০০৮ সালে ৫ ডিসেম্বর প্রথমবারের মত দিনাজপুর-৩ (সদর) আসন হতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময়ে তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটি ও বেসরকারি সদস্যদের বিল সংক্রান্ত কমিটির সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ২০১৪ সালে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ নির্বাচিত হন।

২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কোপেন হেগেন জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (COP-10)-এ যোগদান করেন। তিনি ব্রাজিলের রিওডি জেনেরিওতে, মেক্সিকো (COP-16)-তে ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান (COP-17 2011) এ আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে যোগদান করেন। তিনি ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন ডিসিতে GLOBAL Climate Legislation Summit ও জুন মাসে মেক্সিকো সিটিতে GLOBAL World Summit of Legislators এ যোগদান করেন। একই সালে তিনি GLOBLE International Bangladesh Chapter এর সেক্রেটারি নিযুক্ত হোন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার/সিম্পোজিয়াম এ অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড, লন্ডন, জার্মান, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইডেন, নরওয়ে, আর্জেন্টিনা, পেরুগুয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন , ভারত এবং থাইল্যান্ড দেশসমূহ সফর করেন।
ব্যক্তিগত জীবনঃ
রাজনৈতিক পরিমন্ডল ছাড়াও তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। তাঁর বাবা এম আবদুর রহিম ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পশ্চিম জোনের জোনাল চেয়ারম্যান ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী প্রয়াত আবদুর রহিম স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচয়িতাদের একজন। স্ত্রী নাদিরা সুলতানা মুক্তি, দুই কন্যা ইসরাক মার্জিয়া ও রাইসা মুমতাহিনা আর পুত্র রাফিদুর রহিমকে নিয়েই সাজানো ইকবালুর রহিমের সংসার।

মুক্তহস্ত একজন দাতা হিসেবেও নিজ নির্বাচনী এলাকায় তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয়। নির্বাচনী এলাকার অনেক জনকল্যাণমূলক (Charity work) কাজের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত তিনি। বিশেষত, গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বৃত্তি প্রদান, মসজিদ-মন্দির নির্মাণ ও সংস্কার এবং স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠায় তিনি নিরলসভাবে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তিনি নিজ উদ্যোগে হিজড়া জনগোষ্ঠীদের বাসস্থান, জীবন ধারণ, কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের জন্য দিনাজপুর সদর উপজেলার বাঙ্গিবেচায় ‘মানবপল্লী’ নামে হিজড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলেন যা বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র হিজড়া আশ্রয় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। জনগণের সেবায় কাজ করা এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রদানকারী হিসেবে তিনি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক পুরস্কার ওয়ার্ল্ড লিডারশীপ ফেডারেশন এ্যাওয়ার্ড-২০১৭-তে ভূষিত হন।

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter