ঈদুল আজহায় ওয়ালটনের ৭ লাখ ফ্রিজ বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
করোনাভাইরাস মহামারিতে স্থবির হয়ে পড়েছিল বিশ্ব অর্থনীতি। বর্তমানে কিছুটা উন্নতি হলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয় নি। এমন প্রতিকুল অবস্থায়ও দেশের রেফ্রিজারেটর বাজারে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্র্যান্ড ওয়ালটন। এবারের ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদে প্রায় ৭ লাখ রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার বিক্রি হয়েছে ওয়ালটনের। একই সময়ে অনলাইনে ফ্রিজ বিক্রিতে অবিশ্বাস্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ওয়ালটন।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের ফ্রিজ বিক্রির প্রধান মৌসুম ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। সারা বছর যে পরিমাণ ফ্রিজ বিক্রি হয়, তার প্রায় অর্ধেকই হয় কোরবানির ঈদে। ফ্রিজ বিক্রেতারাও এ মৌসুম ঘিরে তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সাজান। কিন্তু চলতি বছর করোনার কারণে এ খাত প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তার মধ্যেও আশাতীত পরিমাণ ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে ওয়ালটনের।

বরাবরের মতো সিংহভাগ ক্রেতা বাংলাদেশে তৈরি আন্তর্জাতিকমানের ওয়ালটন ফ্রিজে আস্থা রেখেছেন। ফলে ক্রেতা চাহিদা ও বিক্রিতে স্থানীয় বাজারে ওয়ালটন ফ্রিজ বিশাল ব্যবধানে শীর্ষে রয়েছে।

ফ্রিজ ব্যবসায়ী এবং বিক্রেতাদের দেয়া তথ্য মতে, রমজানের ঈদ থেকে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত অর্থাৎ গত মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে প্রায় ১০ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে। যার মধ্যে ৭ লাখ ফ্রিজই ওয়ালটনের। সারা দেশে ১৭ হাজারেরও বেশি আউটলেটের পাশাপাশি অনলাইনের ই-প্লাজা থেকে ক্রেতারা ওয়ালটন ফ্রিজ কিনেছেন। করোনাকালে ই-প্লাজায় ফ্রিজ বিক্রি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ সময়ে অনলাইনে ফ্রিজ বিক্রিতে ২,০০০ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ওয়ালটনের।

জানা গেছে, প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও ওয়ালটন ফ্রিজের অভাবনীয় বিক্রয় সাফল্যে বেশ কিছু বিষয় অবদান রেখেছে। যার মধ্যে অন্যতম ক্রেতাচাহিদা অনুযায়ী অসংখ্য মডেলের ফ্রিজ তৈরি, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারের সংযোজন, আকর্ষণীয় ডিজাইন, আন্তর্জাতিক মান, সাশ্রয়ী দাম, কিস্তি সুবিধা, সর্বোচ্চ গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টি, দ্রুত ও সহজলভ্য বিক্রয়োত্তর সেবা এবং ডিজিটাল ক্যাম্পেইনে দেয়া বিভিন্ন সুবিধা উল্লেখযোগ্য।

এবারের কোরবানির ঈদে অনলাইনে ফ্রিজ বিক্রির অবিশ্বাস্য প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক এবং অনলাইন সেলস বিভাগের প্রধান মো. তানভীর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ ঘরবন্দি ছিলো। বৈশ্বিক এ দুর্যোগের মধ্যে তারা যাতে তার প্রয়োজনীয় পণ্যটি ঘরে বসে পেতে পারেন, এজন্য ওয়ালটন অনলাইন সেলসে কার্যক্রমে ব্যাপক জোর দিয়েছিলো।

বাংলাদেশে ওয়ালটনের সর্ববৃহৎ অনলাইন সেলস নেটওয়ার্ক ই-প্লাজার (যঃঃঢ়ং://বঢ়ষধুধ.ধিষঃড়হনফ.পড়স) মাধ্যমে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশব্যাপী পণ্য ডেলিভারি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ই-প্লাজা থেকে কেনা পণ্যে আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট ছিলো। যার ফলে ফ্রিজ, টিভি, হোম অ্যাপ্লায়েন্সহ অন্যান্য ওয়ালটন পণ্যের বিক্রি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

ওয়ালটন ফ্রিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ফ্রিজ উৎপাদন ও বিপণনে আমরা মূলত দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছি। গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন এবং বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে গ্রাহকদের জীবনযাত্রার মান উন্নতিকরণ। পাশাপাশি উৎপাদন পর্যায়ে ফাইভ এস, সিক্স সিগমা কাইজেনসহ আধুনিক টুলসের ব্যবহার তো আছেই।

কোয়ালিটি কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে কিউএ, আইকিউসি, পিকিউসি, এবং ওকিউসি এর প্রতিটি ধাপেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে গ্রাহকদের কাছে বাজারের সেরা ফ্রিজটি পৌঁছে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ওয়ালটন ফ্রিজের উৎপাদন, গবেষণা ও উন্নয়ণ, মান নিয়ন্ত্রণসহ সব ধাপে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে। ওয়ালটন ফ্রিজের কুলিং, স্ট্রাকচারাল, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ডিজাইনের নিয়মিত উন্নয়নের প্রভাবে ফ্রিজে যুক্ত হয়েছে টার্বো কুলিং, কুইক ফ্রিজিং এন্ড রিকভারি, লো এনার্জি কনজাম্পশন, প্রিসাইজ টেম্পারেচার ডিসট্রিবিউশন, আইওটি স্মার্ট ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজিং, লো থার্মাল কন্ডাক্টিভ ফোমিং সহ আধুনিক সব প্রযুক্তি। এছাড়াও রয়েছে মাল্টি হেড ফোমিং, লক রিং, অটোমেটেড ব্রেজিং, হিলিয়াম লিক ডিটেকশন সহ বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি।

আন্তর্জাতিক মান যাচাইকারি সংস্থা নাসদাত ইউনিভার্সাল টেস্টিং ল্যাব থেকে মান নিশ্চিত হয়ে ওয়ালটনের প্রতিটি ফ্রিজ বাজারে ছাড়া হচ্ছে। ওয়ালটন ফ্রিজের রয়েছে বিএসটিআইয়ের ফাইভ স্টার এনার্জি এফিশিয়েন্সি রেটিং।

ফ্রিজ উৎপাদন ও রপ্তানিতে ওয়ালটন অর্জন করেছে আইএসও, ওএইচএসএএস, ইএমসি, সিবি, আরওএইচএস, এসএএসও, ইএসএমএ, ইসিএইচএ, জি-মার্ক, ই-মার্ক ইত্যাদি সার্টিফিকেট। ফলে আন্তর্জাতিকমানের ওয়ালটন ফ্রিজ স্থানীয় বাজারে শীর্ষস্থানের পাশাপাশি রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

ওয়ালটন ফ্রিজের প্রোডাক্ট ম্যানেজার শহীদুজ্জামান রানা জানান, স্থানীয় বাজারে তাদের রয়েছে শতাধিক মডেলের ফ্রস্ট, নন-ফ্রস্ট, ডিপ ফ্রিজ ও বেভারেজ কুলার। দাম মাত্র ১০,৯৯০ টাকা থেকে ৮০,৯০০ টাকার ভেতর। এর মধ্যে চোখ ধাঁধানো আকর্ষণীয় ডিজাইনের গ্লাস ডোর এবং ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইনভার্টার প্রযুক্তির বিএসটিআই’র ‘ফাইভ স্টার’ এনার্জি রেটিংপ্রাপ্ত ডিজিটাল ডিসপ্লে সমৃদ্ধ সাশ্রয়ী মূল্যের ফ্রিজ ক্রেতাদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

ওয়ালটন ফ্রিজে ব্যবহৃত হচ্ছে ডিইসিএস টেকনোলজি সমৃদ্ধ থ্যালেটমুক্ত গ্যাসকেট, হানড্রেড পার্সেন্ট কপার কনডেনসার, ওয়াইড ভোল্টেজ ডিজাইন ও ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি। ফলে এসব ফ্রিজে ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। সম্প্রতি কুল প্যাকসহ ডিপ ফ্রিজ বাজারে ছেড়েছে ওয়ালটন। বাংলাদেশে এই প্রথম এ প্রযুক্তির ফ্রিজার বাজারে এলো।

ফ্রিজে ১ বছরের রিপ্লেসমেন্টসহ কম্প্রেসরে ১২ বছরের গ্যারান্টি, ৫ বছরের ফ্রি বিক্রয়োত্তর সেবা, দেশব্যাপী বিস্তৃত ৭৪টি সার্ভিস সেন্টার থেকে দ্রুত বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা এবং সর্বোচ্চ ৩৬ মাসের সহজ কিস্তি সুবিধা দিচ্ছে ওয়ালটন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এতসব সুবিধা থাকাতেই স্থানীয় বাজারে গ্রাহকপছন্দের শীর্ষে ওয়ালটন ফ্রিজ। ফলে করোনার মতো দুর্যোগের মধ্যেও ওয়ালটন ফ্রিজ বাম্পার সেল হয়েছে। যা এ খাতের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।

-শিশির

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter