ঈদে বাড়ি ফেরাদের দেরিতে ঢাকায় ফেরার সুপারিশ

প্রশাসনঃ

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে গত এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সরকার ঘোষিত ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ কাজে দিয়েছে।

এখন সংক্রমণ অনেকটাই কমে এসেছে। কিন্তু  এর দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে  ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা এবং রাস্তাঘাটে যে ভিড় দেখা যাচ্ছে, তাতে চলতি মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দেশে আবার করোনার সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ঈদ উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মানুষ যেভাবে বাড়ি গিয়েছে, তাদের ফিরতি যাত্রা বিলম্বিত করতে সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঈদ উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মানুষ যেভাবে ভিড় জমিয়ে বাড়ি গিয়েছে, তাদের ফিরতি যাত্রা বিলম্বিত করতে সুপারিশ করা হয়েছে। পরে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে যেন তাদের ফেরানো হয়।

এর সঙ্গে বাড়তি শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট (রূপান্তরিত ধরন), যা ইতিমধ্যে বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। এই ভেরিয়েন্টটি ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি সামলানো মুশকিল হবে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি দেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও আশঙ্কা করছে, ঈদের পর দেশে সংক্রমণের আরেকটি ঢেউ আসতে পারে।

গত বছর দেশে ঈদুল ফিতরের পরপরই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বড় লাফ দেখা দিয়েছিল। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এবারও একই পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানা দীর্ঘদিন বিধিনিষেধ চালানো সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা এবং রোগী শনাক্ত করে আইসোলেশন (বিচ্ছিন্ন রাখা), রোগীর সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টাইন (সঙ্গনিরোধ) রাখা এবং সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ি নিশ্চিত করা জরুরি।

চলতি বছরের মার্চ থেকে দেখা দেয় সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। মার্চের শেষ দিক থেকে এপ্রিলের প্রথম দিকে সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এ সময় প্রতিদিন সাত হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হতে থাকে। একপর্যায়ে দৈনিক মৃত্যু চলে যায় শতকের ওপরে। দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে ৫ এপ্রিল থেকে ‘বিধিনিষেধ’ দেয় সরকার। এর এক সপ্তাহ পর থেকে দেওয়া হয় ‘সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধ’। 

এর প্রভাবে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। চলতি মে মাসের প্রথম দিন থেকে রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। এর মধ্যে ২৫ এপ্রিল থেকে শপিং মল খুলে দেওয়া হয়েছে। ৬ মে থেকে চালু হয়েছে গণপরিবহন। আর ৭ মে থেকে সংক্রমণের নিম্নমুখী প্রবণতায় ছেদ পড়ে। 

এদিকে ১৪ মে সরকারি হিসাবে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নয় সপ্তাহ পর নেমে এসেছে হাজারের নিচে। আর সাত সপ্তাহ পর দৈনিক মৃত্যু ত্রিশের নিচে নেমে এসেছে। তবে পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ১০.৮২ শতাংশ যা মোটেও সন্তোষজনক নয় বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যবিদরা। 

ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে জনসমাগম এবং মানুষের চলাচল যেভাবে বেড়েছে তাতে স্বাস্থ্যবিদরা অত্যন্ত শঙ্কিত। এমন চলাচল ও জনসমাগমের কারণে দ্বিতীয় ঢেউ কমিয়ে আনতে আনতে তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে যাবে। আবার তৃতীয় ঢেউ কমাতে কমাতে সামনে আসবে কোরবানির ঈদ। তখনো এভাবে চলাচল করতে থাকলে, এটার শেষ হবে না।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তদের ৬১ শতাংশ হয় বাজারে গেছেন নয়তো গণপরিবহন ব্যবহার করেছেন।

এই দুটি স্থান সংক্রমণের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ‘বিধিনষেধ’ শিথিল হওয়ার পর এই দুটি জায়গাতেই মানুষের ভিড় বেশি দেখা যাচ্ছে।

-ডিকে

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter