উত্তাল দিল্লি, নিহত ১৭

উত্তাল দিল্লি, নিহত ১৭

আন্তর্জাতিকঃ
ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ঘিরে দেশটির রাজধানী দিল্লিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের মধ্যেই গতকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে পুলিশ সদস্যসহ ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ৭০ জন গুলিবিদ্ধিসহ আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক ব্যক্তি। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হ্ছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির কিছু এলাকায় ‘দেখামাত্র গুলি করা’র নির্দেশ জারি করা হয়েছে। পিছিয়ে দেয়া হয়েছে আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি, বুধবারের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোও।

মঙ্গলবার দুপুর থেকেই উত্তপ্ত ছিলো উত্তর-পূর্ব দিল্লির বেশ কয়েকটি এলাকা। বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামেন কয়েক হাজার মানুষ। আইনের সমর্থক ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতাকর্মীরাও পাল্টা মিছিল নিয়ে মাঠে নামলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় দেয়।

দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এরই এক পর্যায়ে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। ইটপাটকেল ছোঁড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে পুলিশ। ত্রিমুখী সংঘর্ষে অনেকেই হতাহত হন।

সিএএ সমর্থক ও বিরোধী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় সোমবার থেকেই ওই এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। ওই দিন পাথরের আঘাতে দিল্লি পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত হন।

মঙ্গলবারও উত্তর-পূর্ব দিল্লির খাজুরি খাস এলাকাতেও নতুন করে পাথর নিক্ষেপের অভিযোগ উঠে। ওই এলাকায় পুলিশ ও র্যা ফ মোতায়েন করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভজনপুরা, চাঁদবাগ, করওয়াল নগর এলাকায় দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। লাঠি-রড হাতে রাস্তায় নেমে সমবেত হয় জনতা।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে মৌজপুর এবং ব্রহ্মপুরীতে আগের দিনের মতো ফের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরস্পরকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া শুরু হয়। বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও এদিন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। দুপুরে ওইসব এলাকা থেকে গুলির শব্দও শোনা যায়। এদিন মৌজপুরে একটি ই-রিকশায় ভাঙচুরও চালিয়ে রিকশার যাত্রীদের মূল্যবান জিনিসপত্রও লুট করে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ।

মৌজপুর এবং ব্রহ্মপুরীর মতো একই পরিস্থিতি কারওয়াল নগরে। ভোররাতে সেখানে একটি টায়ার কারখানায় বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বেশ কিছু গাড়িতে।

সন্ধ্যার পরও কারফিউর মধ্যেই চাঁদবাগ এলাকায় নতুন করে অগ্নিসংযোগ ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। পুলিশ সিএএ-বিরোধী অবস্থান কর্মসূচির কেন্দ্রস্থল জাফরাবাদ রোড খালি করে দেয় দিল্লি পুলিশ। দিল্লি মেট্রোর পিঙ্ক লাইনে ৫টি স্টেশন মঙ্গলবারও বন্ধ ছিল।

উদ্ভূত পরিস্থিতি দিল্লিবাসীর প্রতি শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়ে এমন আহ্বান জানান তিনি।

এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র সঙ্গে বৈঠকে দিল্লির সীমানা সিল করে দেওয়ার দাবি করেছেন কেজরিওয়াল। কেজরিওয়াল ছাড়াও মঙ্গলবার দুপুরে অনিল বৈজল এবং অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন অমিত শাহ।

-কেএম

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter