এক দশক পর ইন্টারকন্টিনেন্টালে ব্রিটিশ কারি ফেস্টিভ্যাল

এক দশক পর ইন্টারকন্টিনেন্টালে ব্রিটিশ কারি ফেস্টিভ্যাল

লাইফস্টাইলঃ
দীর্ঘ এক দশক পর আবারও ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জনপ্রিয় ব্রিটিশ ক্যুজিন ও কারি প্রদর্শনী আয়োজন ব্রিটিশ কারি ফেস্টিভ্যাল।

আজ (১৯ অক্টোবর) ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’য় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বহুল প্রতীক্ষিত এই ফেস্টিভ্যালের ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সাবেক সভাপতি ও ইউকে হাউজ অব লর্ডস-এর একজন আজীবন সদস্য লর্ড কারান বিলিমোরিয়া, সিটি ব্যাংক-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতিকুর রহমান, ব্রিটিশ হাই কমিশন-এর ডিরেক্টর অব কমিউনিকেশনস ফ্রান্সেস জ্যাকস, কারি লাইফ ম্যাগাজিন-এর সম্পাদক সৈয়দ বেলাল আহমেদ ও প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’র মহাব্যবস্থাপক অশ্বনী নায়ার উপস্থিত ছিলেন।

২০০১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো বিশ্ব-দাপানো এই ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়, যা সর্বশেষ ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়।

দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় পর লাইফ ম্যাগাজিন ইউকে ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’র আয়োজনে আবারও তা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

অভিজাত এই হোটেলের ব্যুফে ডিনার রেস্টুরেন্ট ‘এলিমেন্টস-অল ডে ডাইনিং’-এ আগামী ২১ অক্টোবর শুরু হয়ে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ফেস্টিভ্যালটি চলবে।

বিগত দুই দশকে ব্রিটিশ কারি ফেস্টিভ্যাল বিশ্ব মঞ্চে শেফদের প্রতিভা প্রদর্শনের মাধ্যমে সেরা ব্রিটিশ কারি অভিজ্ঞতা পৌঁছে দিয়েছে ইউরোপ ও এশিয়া জুড়ে।

এবারের ফেস্টিভ্যালে থাকছেন মিশেলিন স্টার শেফ ডমিনিক চ্যাপম্যান। চ্যাপম্যান বার্কশায়ারের দ্য বিহাইভ রেস্টুরেন্টে হেড শেফ এবং প্যাট্রন। মূলত রেস্টুরেন্টের গুণমান ও ধারাবাহিকতার উপর ভিত্তি করে অসামান্য খাবার ও সেবার জন্য মিশেলিন স্টার প্রদান করা হয়।

বিশ্ব ভ্রমণ এবং অনেক মিশেলিন স্টার শেফের সাথে কাজ করার মাধ্যমে চ্যাপম্যান আন্তর্জাতিক খাবারের সমৃদ্ধ ও জটিল সব স্বাদের সাথে বেশ পরিচিত।

২০১৪ সাল থেকে দ্য বিহাইভ-এ থাকার পাশাপাশি চ্যাপম্যান সম্প্রতি বার্কশায়ারের বারচেটস গ্রিন-এ মিশেলিন স্টার গ্যাসট্রোপাব দ্য ক্রাউন অর্জন করেন।

চ্যাপম্যানের ঢাকায় আসার মাধ্যমে এই প্রথমবারের মতো কোনো মিশেলিন স্টার শেফ বাংলাদেশে এসেছে।

এবারের ব্রিটিশ কারি ফেস্টিভ্যালে ডমিনিক চ্যাপম্যান সহ আরও ৫ জন অ্যাওয়ার্ড-বিজয়ী শেফ উপস্থিত থাকছেন। তারা হলেন কেন্টের শোজনা’র মালিক ও শেফ জামাল উদ্দিন আহমেদ, মেইডেনহেড’স দ্য ফ্যাট বুদ্ধার জাফর সোলিম উদ্দিন, দ্য ক্যাপিটাল ডারহাম-এর এক্সিকিউটিভ শেফ সৈয়দ জহুরুল ইসলাম, হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনাল-এর প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ শেফ উৎপল কুমার মন্ডল এবং স্পেশালিটি গ্রুপ-এর এক্সিকিউটিভ শেফ মলয় হালদার।

লর্ড কারান বিলিমোরিয়া বলেন, “কারি যুক্তরাজ্যের নিত্য জীবনযাত্রার একটি অপরিহার্য অংশ৷ গ্রাম কিংবা শহরে, সরকারি আবাসন কিংবা বাসাবাড়িতে সেখানে সবাই কারি খায় এবং খেতে বেশ পছন্দ করে। এই শিল্পের অগ্রগতি বেশ লক্ষণীয়, ১৯৮০’র দশকের মুষ্টিমেয় কিছু রেস্টুরেন্টের সংখ্যা এখন ১২ হাজারেরও বেশি।

কেন এই কারি বিপ্লব? উত্তরটি বেশ সহজ: যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী কম্যুনিটি এবং সেরা বাংলাদেশী শেফ ও রেস্টুরেন্টগুলোই এর মূল কারণ। যার কারণে আজকে আমাদের এখানে উপস্থিত থাকাটাও বেশ প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কিংবা শক্তি, শ্রম ও আরও নানান খাতে সংকটের কারণে আমরা যে কঠিন একটা সময় পারছি, তার মধ্যে এমন একটি উৎসব সূর্যরশ্মির মতো আলোকোজ্জ্বল।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে আসার পর থেকেই আমার মনে হয়েছে আমি নিজের বাড়িতেই আছি। ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায় আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত; এর যে কেবল দুর্দান্ত একটি ইতিহাস আছে তাই ই নয়, বরং বিশ্বের অন্য যে কোনও জায়গার তুলনায় এটি বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধায় সমৃদ্ধ।”

আসন্ন ব্রিটিশ কারি ফেস্টিভ্যাল সম্পর্কে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, “আমি সত্যিই ভীষণ আনন্দিত যে, ব্রিটিশ কারি ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী আয়োজনে বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ কারি প্রদর্শনী ও উদযাপন হচ্ছে।

আমাদের কারি হাউজগুলো দুইশ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যের মানুষের জীবন জুড়ে আছে এবং বর্তমানে তা ব্রিটিশদের ফেভারিট।

ব্রিটিশ কারির শুরুটা হয়েছিল বাঙ্গালীদের হাত ধরে এবং এর ধারাবাহিক শক্তিশালী অগ্রগতি ব্রিটবাংলাবন্ধন-এরই প্রতীক।”

শেফ ডমিনিক চ্যাপম্যান বলেন, “বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার ব্যাপারে উন্মুখ হয়ে আছি। রন্ধনশিল্পে অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন এবং দলের সাথে কাজ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

আমি তো অবশ্যই ব্রিটিশ রেসিপি দ্বারা অনুপ্রাণিত খাবার তৈরি করব, তবে আমি স্থানীয় রান্নার সর্বোচ্চ স্বাদও নিতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “ফেস্টিভ্যালের আগের আসরগুলোতে আমি অনেক কিছু শিখেছি, উপমহাদেশের রসনাবোধের তুলনায় ‘ব্রিটিশ কারি’ আসলেই বেশ আলাদা।”

কারি ব্রিটেনের জনপ্রিয় খাবার। এমনকি ব্রিটিশ কারি শিল্প ক্রমশ সমৃদ্ধ হচ্ছে, ব্রিটেনে বর্তমানে আনুমানিক ১২০০০ কারি হাউস রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ রেস্টুরেন্ট বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত শেফ দ্বারা পরিচালিত হয়।

কারি লাইফ ম্যাগাজিন ইউকে-এর সৈয়দ বেলাল আহমেদ এবং সৈয়দ নাহাস পাশা দুই ভাই সম্মিলিতভাবে এই ব্রিটিশ কারি ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমে সর্বজনীন সুস্বাদু খাবারের স্বাদ পৌঁছে দিচ্ছে বিশ্বজুড়ে।

ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ব্রিটিশ কারি ফেস্টিভ্যাল ২০২২-এর টাইটেল স্পন্সর সিটি ব্যাংক-অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস; কো-স্পন্সর হালদা ভ্যালি এবং হসপিটালিটি পার্টনার ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা।

সুস্বাদু ব্রিটিশ কারি ব্যুফে উপভোগ করা যাবে মাত্র ৭,৫০০ টাকায় জনপ্রতি। সেইসাথে নির্দিষ্ট ব্যাংকের কার্ডের ব্যবহারে থাকছে বাই ওয়ান গেট ওয়ান সুবিধা।

-শিশির

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter