ওয়ালটনের করোনা সরঞ্জাম:মেডিকার্ট রোবট, রিমোর্ট কন্ট্রোল ইউভি-সি

ওয়ালটনের করোনা সরঞ্জাম:মেডিকার্ট রোবট, রিমোর্ট কন্ট্রোল ইউভি-সি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় একের পর এক দরকারি চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি করছে বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন। এবার ওয়ালটন তৈরি করলো মেডিকার্ট রোবট এবং জীবাণুনাশক রিমোর্ট কন্ট্রোল ইউভি-সি সিস্টেম।

বৃহস্পতিবার (১৪ মে ২০২০) সরকারের আইসিটি বিভাগকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ওই চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো হস্তান্তর করবে ওয়ালটন। বিকাল ৩টায় ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ আইসিটি বিভাগ এবং ওয়ালটনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, ওয়ালটনের তৈরি মেডিকার্ট রোবট ডিভাইসটির মডেল ‘ডব্লিউআরএমসি-৪০০ এপি-২০২০’। এটি সম্পূর্ণভাবে ওয়ালটনের তরুণ ও মেধাবী প্রকৌশলীদের নিজস্ব ডিজাইনে ডেভেলপ করা হয়েছে। এটি আরএফ ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রিত একটি অটোমেটিক রোবট। যা ৪০০ মিটার বা ১৩০০ ফুট ব্যাসের এলাকায় বিচরণ করতে পারে এবং স্বয়ংক্রিভাবে খাদ্য, ওষুধ, চিকিৎসা কিংবা অন্যান্য সরঞ্জাম পরিবহন করতে পারে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি চালিত এ রোবট একবার পূর্ণ চার্জে ৬ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে পারে।

এই রোবট ব্যবহার করে আইসোলেশনে থাকা করোনাভাইরাস কিংবা অন্যান্য ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসাসেবা দেয়া যাবে। চিকিৎসক তার কক্ষে বা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসেই কম্পিউটার, মোবাইল ফোন বা রিমোটের মাধ্যমে এ রোবট নির্দিষ্ট অপারেটরের সাহায্যে অপারেট করতে পারবেন। রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে পারবেন। এতে বিশেষ ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও স্পিকার সংযুক্ত করা আছে। এর মাধ্যমে চিকিৎসক এবং রোগী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। চিকিৎসাক্ষেত্র ছাড়াও এই রোবট অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জনসাধারণ সমাগমের স্থান যেমন বিমান কিংবা নৌ বন্দর, বাস-রেল স্টেশন, শপিং মল ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।

ওয়ালটনের আরএন্ডডি প্রকৌশলী আলিম হাসান ফেরদৌস জানান, তাদের তৈরি জীবাণুনাশক রিমোর্ট কন্ট্রোল ইউভি-সি সিস্টেমের একটি হলো ইউভি (আল্ট্রা ভায়োলেট) ট্রলি। যার মডেল ডব্লিউইউভি-টি১৫০। এটি ২৫৩.৭ ন্যানোমিটার রশ্মি যা যেকোনো বস্তুর পৃষ্ঠতলের ৯৯.৯৯ শতাংশ পর্যন্ত ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। রিমোট কনট্রোলের মাধ্যমে দূর নিয়ন্ত্রিত এ ইউভি ট্রলি হাসপাতাল, বাসাবাড়ি এবং অফিসে ব্যবহার করা যাবে।
তিনি জানান, ইউভি লাইট সরাসরি মানবদেহ এবং চোখে ব্যবহার ক্ষতিকর। কিন্তু ওয়ালটনের তৈরি এ ইউভি ট্রলিতে মানবদেহের জন্য আধুনিক সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।

ওয়ালটন আরো তৈরি করেছে জীবাণুনাশক রিমোর্ট কন্ট্রোল ইউভি-সি থার্মাল জার্মিসাইডাল চেম্বার। যার মডেল ‘ডব্লিউ ইউভি-টি২৬০এল’। এটি দুইভাবে জীবাণু ধ্বংস করে। ইউভি রশ্মি এবং তাপের মাধ্যমে। এতে রিসাইডুয়াল হিটার ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এটি ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত আদ্রতামুক্ত তাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে স্বয়ংক্রিভাবে তাপ এবং সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতেও মানবদেহের জন্য আধুনিক সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর বিশেষ সেন্সর মানুষ কিংবা প্রাণীর উপস্থিতি পেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

এই ইউভি-সি থার্মাল চেম্বার দিয়ে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস, বাসনপত্র, খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করা যাবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ওয়ালটনের তৈরি মেডিকার্ট রোবট এবং জীবাণুনাশক রিমোর্ট কন্ট্রোল ইউভি-সি সিস্টেম করোনা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশে তৈরি এসব গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম বিদেশে রপ্তানিরও সুযোগ রয়েছে।

-শিশির

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter