চার রুটে পাতাল রেল স্থাপন করার পরিকল্পনা

অনলাইনঃ

ঢাকার অন্যতম প্রধান সমস্যা যানজট দূর করতে রাজধানী জুড়ে ৪টি সাবওয়ে বা পাতাল রেল নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এজন্য সেতু কর্তৃপক্ষ ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর কনস্ট্রাকশন অব সাবওয়ে ইন ঢাকা সিটি’ নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এটি ২০২০ সালে শেষ হবে বলে জানা গেছে।

অপর দিকে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের একটি প্রস্তাব দেয়া হয় পরিকল্পনা কমিশনে। কিন্তু সেতু বিভাগ এতে ভেটো দেয়ায় আপাতত এ প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়।

সম্ভব্য রুট গুলো হচ্ছে- ১ নম্বার রুট: টঙ্গী-বিমানবন্দর-কাকলী-মহাখালী-মগবাজার-পল্টন-শাপলাচত্বর-সায়েদাবাদ-নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড পর্যন্ত। ২ নম্বর রুট: আমিনবাজার-গাবতলী-আসাদগেট-নিউমার্কেট-টিএসসি-ইত্তেফাক ও সায়েদাবাদ পর্যন্ত। ৩ নম্বর রুট: গাবতলী-মিরপুর-১-মিরপুর-১০-কাকলী-গুলশান-২-নতুনবাজার-রামপুরা টিভি ভবন-খিলগাঁও-শাপলা চত্বর-জগন্নাথ হল ও কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত এবং ৪ নম্বর রুট: রামপুরা টিভি ভবন-নিকেতন-তেজগাঁও-সোনারগাঁও-পান্থপথ-ধানমণ্ডি-২৭, রায়েরবাজার-জিগাতলা-আজিমপুর-লালবাগ ও সদরঘাট পর্যন্ত।

এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো: আবুল হোসেন জানান, সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং মধ্যবর্তী প্রতিবেদন শেষ হয়েছে। এরপরই করা হবে খসড়া প্রতিবেদন এবং তারপরই চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। আগামী ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমীক্ষার কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

সূত্র মতে, ঢাকা শহরে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। আর প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ৭ হাজার ৯৫০ জন। মোট সড়কের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ২৮৬ কিলোমিটার এবং সড়কের ঘনত্ব ৯. ০১ শতাংশ যার আদর্শমান হচ্ছে ২০-২৫ শতাংশ। ফাঁকা জায়গা রয়েছে ৩.০৯ শতাংশ, যা থাকার প্রয়োজন ১৫-২০ শতাংশ। সড়কের বর্তমান সক্ষমতা ৩ লাখ হলেও বিআরটিএর নিবন্ধিত গাড়ি প্রায় ৯ লাখ। ঢাকা শহরে যানজটের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সেতু বিভাগ ঢাকা শহরে সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

এ বিষয়ে বলা হচ্ছে, সড়কপথে যেখানে ১০০ বাসে ঘণ্টায় ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারে, সেখানে সাবওয়েতে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রীর চলাচল সম্ভব। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানা গেছে, ২৪২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে (সরকারের নিজস্ব অর্থেই) সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।

এই সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রস্তাবিত সাবওয়ে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের পরিমাণ, সম্ভাব্য উৎস, প্রয়োজনীয় এয়ারফ্লোর ব্যবস্থা, সাবওয়ের জন্য অপসারিত মাটি কোথায় এবং কিভাবে রাখা হবে বা কিভাবে ব্যবহার করা হবে এবং সাবওয়ের অবস্থান, এলাইনমেন্ট ও দৈর্ঘ্য নির্ধারণ, প্রকল্পের বিভিন্ন উপ-অঙ্গে নির্মাণ পদ্ধতি, জিওটেকনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন, সিসমিক স্টাডি ও সার্ভে, ট্রাফিক সার্ভে করা হবে।

এছাড়াও পরিবেশ ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত সমীক্ষা পরিচালনা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রাথমিক ডিজাইন প্রণয়ন ও এর ভিত্তিতে প্রাক্কলন প্রস্তুত, ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা প্রণয়ন, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ এবং ক্রয়, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। অন্যদিকে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ‘ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে সাবওয়ে নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ নামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় নির্ধারণ হয়েছে ৪৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

রবিবার এ প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় সেতু বিভাগের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ

এরশাদ ‘পল্লীনিবাসে’ সমাহিত হতে চেয়েছিলেন

এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, ঢাকার চারটি রুটে সাবওয়ে নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ চলছে। এসব রুটে টঙ্গী-বিমানবন্দর রয়েছে। সেখানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটির রুটের মধ্যে দ্বৈধতা রয়েছে। সেতু বিভাগের পক্ষ থেকেও এ সময় ভেটো দেয়া হয়।

এ বিষয়ে পরে পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়, সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে তারপর প্রকল্পটির প্রস্তাব করতে হবে। তখন আবারও পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে। আপাতত এটি স্থগিত থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter