ছুটছি বিশ্বাসের পাখায় ভর করে

ফরিদা ইয়াসমীন জেসি, লন্ডন থেকেঃ

( ক্রিকেটার মাশরাফি , এক্টর ডিবজল, এক্টর ইলিয়াস কাঞ্চন, এক্টর ফারুক, এক্টর বাবু, ফুটবলার কায়সার হামিদ, কমেন্টর জাফরুল্লা সারাফত)

: হ্যালো- হ্যালো মাশরাফি হ্যালো।
; হ্যালো, জি বলুন কে আপনি?
; আমার নাম ফরিদা ইয়াসমিন জেসি। কেমন আছো ভাই?
ভালো আছি আপু, বলোন কি করতে পারি আপনার জন্য।
; তোমার একটা প্রোগ্রাম দেখলাম প্রতিবন্ধীদের নিয়ে।
তুমি বলেছো “আমাকে সবাই হিরো বলে আমি আসলে হিরো নই, হিরো তারা যারা প্রতিবন্ধী হয়েও জীবনকে জয় করেছে”
; হা আপু আমি বলেছিলাম এ কথা। এখন বলুন আপনার জন্য আমি কি করতে পারি।
; আমি বিশেষ শিশুদের নিয়ে কাজ করছি এদের প্রমোট করার জন্য তোমার উপস্থিতি পেলে খুব খুশি হবো।
; তুমি একটা এ্যাম্বুলেন্স কিনে দিয়েছো, তোমাকে একটা গাড়ি দিয়া হয়েছিলো সেটার বদলে।
যদি লার্ন এন্ড লিভ স্কুলের জন্য একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করতে। ওদের স্কুলে আসতে বড় কষ্ট হয়।
; ইনশাআল্লাহ আপু। আমি ওমরা হজ্বে যাচ্ছি ফিরে আসি কথা হবে। দোয়া রাখবেন। ইত্যাদি ইত্যাদি।

ডিপজল ভাই
; হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম ডিপজল ভাই
; উয়ালাইকুমুচ্ছালাম, কে আপনি?
; আমার নাম ফরিদা ইয়াসমিন জেসি। লন্ডন থাকি। কাজ করছি প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে।
; ভেরি গুড। বলুন আমি কি করতে পারি আপনার জন্য?
; ডিপজল ভাই আমরা সবাই জানি আপনি খুব দান খয়রাত করেন। আমার বাচ্চাগুলি স্কুলে আসতে পারেনা, একটা গাড়ির ব্যবস্থা যদি করে দিতেন।
; খুব ভাল কাজ, কয়টা গাড়ি লাগবে তাই বলো। ওই রোডের সব গাড়িকে বলে দিচ্ছি তোমার স্কুলের বাচ্চাদের ফ্রি নিয়ে আসবে।
; শুধু গাড়ি নয় আপনাকে থাকতে হবে আমার সাথে।
; খুভ ভাল কথা, থাকবো অসুবিধা কি? এটাতো ভাল কাজ। লন্ডনে আসছি দেখা হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।

কাঞ্চন ভাই
; হ্যালো কাঞ্চন ভাই সালাম, ( আমি ফরিদা –++ বিগ ইন্ট্রোডাকশান)
; তাই নাকি খুব ভাল কাজ। আমি অবশ্যই আছি।
; আপনাকে আমার সাথে এডভাইজার হিসাবে রাখতে চাই।
; নিশ্চয়ই থাকবো। আমাকে বলবে কি করতে হবে, যদিও অনেক ব্যাস্ততায় কাটে সময় আমার।
; কাঞ্চন ভাই, অনুষ্ঠান গুলিতে যেতে হবে। বাচ্চারা অভিভাবকরা উৎসাহিত হবে আপনাকে পেলে।
; ইনশাআল্লাহ পাবে আমাকে। আগে ডেট করে বলে রাখবে। লন্ডনে আসছি দেখা হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

ফারুক ভাই
;হ্যালো ফারুক ভাই আসসালামুয়ালাইকুম
; হ্যালো কে? চিনতে পারছি না।
; ফারুক ভাই আমার নাম ফরিদা ইয়াসমিন জেসি।
; বলো কি বলবে বয়সে ছোটই মনে হচ্ছে তাই তুমি করেই বলছি।
; আমি লার্ন এন্ড লিভ নামে একটা প্রতিষ্ঠান গড়ছি প্রতিবন্ধীদের জন্য। আপনাকে সাথে চাই।(লংগ ডিস্কাশন)
; চিন্তা করবানা তোমার প্রতিষ্ঠান আমার নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করে কাজ করবো।এত ভাল একটা কাজ করছো।
; ফারুক ভাই সিলেটে মেডিকেল ক্যাম্প করতে চাচ্ছি জেতে হবে।
; ওকে যাবো। একটু সময় দাও, আমার বন্ধু ডাক্তার নাসিম কেও বলবো। ইত্যাদি ইত্যাদি।

বাবু ভাই( ফজলুর রহমান)
; বাবু ভাই সালাম, আমি লন্ডন থেকে ফরিদা বলছি, বাসায়? নাকি সুটিং এ আছেন?
; সুটিং এ লাঞ্চ শেষ করলাম, বলেন।
; আমার নাম্বার পাইলেন কই?
; সে এক বিরাট ইতিহাস। সিক্রেট থাক।
; আমি প্রতিবন্ধী দের নিয়ে কাজ করছি, একটা পাঁচ মিনিট এর ষ্টোরি বানাতে কত লাগবে? আপনার ঈদের বাবার জুতা খুব মনে ধরেছে আমার। এই রকম কিছু একটা।
; ৩ লাখ থেকে ৬/৭ লাখ।
; বলেন কি? এত্তো। যাইহোক রেডি হলে করে দিতে হবে কিন্তু, আমি আপনার একজন দারুন ভক্ত।

; অবশ্যই পাবেন আমাকে, এরকম একটা ভালো কাজে। ফোন দিবেন। জানাবেন।ইত্যাদি ইত্যাদি।

কায়সার ভাই
; কায়সার ভাই সালাম, ঘুমাইছেন নাকি?
;নারে ভাই ফজরের আজান দিলে নামাজ পড়ে ঘুমাই। বলো কি বলবা
; আপনি অনন্ত জলিলের নাম্বার টা ম্যানেজ করে দ্যান না।
; কি করবা? সিনেমা বানাইবা নাকি?
; না,না কি বলেন। শুনেছি অনন্ত জলিল নাকি খুব দান করেন অসহায়দের। কিছু নগদ টাকা যদি লার্ন এন্ড লিভের জন্য পেতাম। বাচ্চাদের নতুন কাপড় বানিয়ে দিছি, খেলনা কিনে দিছি, এখোনো টাকা বাকি, থ্যারাপির কিছু ইকোয়েপমেন্ট কিনতে হবে। এক্সটা টাকা দরকার। যা আছে সেটাতো স্টাফ বেতন বাচ্চাদের ভাতা ও অন্যন্য কাজে চলে যায়।
; ভাতাও দিচ্ছো নাকি?
; হা, ওদের জন্য গাড়ির ব্যাবস্থা করতে পারি নাই তাই যাতায়াত এর জন্য প্রতিজনকে ভাতা দিচ্ছি।

; দেখি পাই নাকি অনন্ত জলিলের নাম্বার জোগার করতে হবে, আমার কাছে নাই। ইত্যাদি ইত্যাদি।

জাফরুল্লাহ শারাফাত—–ক্রিং ক্রিং
বাঘা মন্টু—– ক্রিন ক্রিং
মসিউর রহমান —- ক্রিং ক্রিং

এবার আমার কথা বলি
নিজেকে খোলা বুক করে নিয়েছি সকলে পড়তে পারবে বলে , যে কথা লিখছি যে ছবি দিচ্ছি খোলা বলেই পড়ছো সকলে। আগুনের মত অসম্ভব তীব্র নই আমি ,যে ভয় পাবে পাশে দাঁড়াতে।

অলৌকিক অন্ধকার রাত্রির মত কোনো আকাশ নই যাতে আড়ালের গল্প ভেবে উপহাসে বিদ্রোপ করবে।

দিবালাকের আলোতে একটা সপ্নের ভেতরে দিয়ে হাঁটছি আমি ভালবাসাহীন বিষন্ন পৃথিবীতে। দুঃখের লোকালয়ে যাদের বাস তাদের নিয়ে।

কাশবনের কাশ ফুলের মত কিংবা বরফ গলা নদীর মত সাদা পোশাকে যে শিশুদের দেখছো, ওরা পথের পাশে ছিলো বিদ্যাহীন অবহেলায়।

ওরা বিদ্যালয়ে এসেছিলো ছিন্নভিন্ন পোশাকে, ছেড়া চপ্পলে। বিলেতের শিশুদের গায়ে সফেদ সাদা পোশাক দেখি, ফুলের মত ওদের ঠোটে হাসি দেখি।

আগুনের দীর্ঘ শিখা জ্বলে উঠে বুকের ভেতর। ভাবি মানুষে মানুষে এত বিশাল ব্যাবধান কেমন করে হতে পারে।

মন যা চায়। বিলেতি স্কুলের পোশাকের নানা রংয়ের নানা বাহারের ছবি পাঠাই, কোনটা লাগে ভালো তাদের। কোনটাতে মানায় ভালো তাদের গায়। মাসুদ করে যাচাই বাছাই। অবশেষে তৈরি হয়ে পোশাক আসে আমার সোনামনিদের গায়ে।

মনে কি হয়না ওদের শহরের বড়বাবুদের ধনির দুলাল,? মনে কি হয়না সভ্যতার মোড় ঘুরে গেছে তাদের দিকেও।

তাদের জীবনের ছিন্ন নদীর বাক এখন সাগরের মোহনার দিকে?
আমি দেখি আর আর দেখি, আমার চোখ ভিজে যায়, জানইতো কেন? সেকথা তোমাদের সবার জানা।

আমি কার কাছ থেকে কি কি চেয়ে নেই সে কথা তোমরা অনেকেই জান। এ লেখা পড়ে বুঝে নিও তোমাদের নাম। একে একে ফোন করি, সময় চাই, পয়সা চাই, বুদ্ধি চাই, ভাল একজন এমপ্লোয়ি চাই।

চেয়ে চেয়ে আমি ছুটছি চাঁদের অভিমুখে, বিশ্বাসের পাখায় ভর করে, একঝাক বলাকা নিয়ে আমার পাখনার নিচে। । দেখে নিও অনায়াসে অতিক্রম করে যাবো হিমালয়। প্রশ্ন কর যদি কি দিয়ে যাচ্ছ বিনিময়ে।

জবাবে বলি বিসর্জন। স্বজনদের ভালবাসা বিসর্জন। নিদ্রা,বিলাসী সময়,এর বিসর্জন, বন্ধুদের আয়েশি বৈঠকের বিসর্জন। বেছে নিয়েছি মরন মূহুর্তের মত নির্জনতা। ভাবনা ঘিরে থাকে সমুদ্রের চেয়েও গভীর এক স্বপ্ন। আর বিশ্বাসের জোনাকির আলো।

আমি মাঠের ফড়িং হয়ে কখনো আরবী ঘোড়া হয়ে ছুটছি, আমি বৃক্ষ সমুহের মাথায় মাথায় উড়ছি গন্তব্যে পৌছাতে কারন হাতের সময় কম, জীবনের বয়স গন্তব্যের পথে। আমার সফলতা নয় রেখে যেতে চাই খোলা আসমান এই শিশুদের জন্য তারা যেতে যেনো পারে যত্রতত্র এখানে সেইখানে সবখানে পরীর মত রঙ ছড়ানো ডানা মেলে।

সাধুবাদ আমার টিমকে, যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছ ভলান্টারিলি, আশা দিচ্ছি বারবার, বৈশাখে ফাল্গুনে দেবো বেতন বাড়িয়ে, কথা রাখতে অবিরত ফোন দিচ্ছি শতজনকে, কাল একজন বললো এত ঝামেলা কেনো করছেন যদি হিমসিম খাচ্ছেন, দান দক্ষিনার এত সখ যখন এতিম খানায় কিছু দিয়ে দিলেইতো হয়ে যায়। এই মন্ত্র আমার প্রযোজ্য নয় বলে রেখে দিলাম ফোন। আরেক জনের নাম্বারে করলাম ডাইয়েল- ক্রিং ক্রিং ক্রিং-

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter