জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সূচনা

অনলাইন ডেস্কঃ

সরকার বিরোধী আন্দোলনে সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন প্ল্যাটফরম জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশকে বাইরে রেখে বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে নিয়ে গঠিত হয়েছে এ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা এসেছে এ প্লাটফরমের। এ ফ্রন্টে যুক্ত রয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল ইসলাম ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আগামীতে একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৭ দফা এবং পরবর্তীতে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে দেশ পরিচালনায় ১১ দফা লক্ষ্যও তুলে ধরা হয়। ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে জাতীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টা চলছিল। আজ সফল হলাম।

দেশ এখন দুঃশাসনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পেশাজীবীরা অনেক আগে থেকেই এটা উপলব্ধি করে আসছেন। আজ এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সফল যাত্রা শুরু হলো।

শুরুতেই যে সব দাবি নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে।

২. গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

৩. বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

৪. কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালো আইন বাতিল করতে হবে।

৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।

৬. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশী ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোট কেন্দ্র, পুলিং বুথ, ভোট গণনাস্থল ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশের ওপর কোনো প্রকার বিধিনিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনকালীন সময়ে গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।

৭. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও কোনো ধরনের নতুন মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

যে সব লক্ষ নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টঃ

১. মুক্তিসংগ্রামের চেতনা ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন, ন্যায়ভিত্তিক, শোষণমুক্ত ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা। এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানকল্পে সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনায়নসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রিকরণ ও ন্যায়পাল নিয়োগ করা।

২. ৭০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের যুগোপযোগী সংশোধন করা। জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করাসহ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, সৎ-যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দানের জন্য সাংবিধানিক কমিশন ও সাংবিধানিক কোর্ট গঠন করা।

৩. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা।

৪. দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা। দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতিকে কঠোর হাতে দমন।

৫. দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুব সমাজের সৃজনশীলতাসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে মেধাকে যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় কোটা সংস্কার করা।

৬. সকল নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিয়তার বিধান করা।
কৃষক শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা।

৭. জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা।

৮. রাষ্ট্রের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক সচ্ছলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দুরীকরণ ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। নিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবন মান নিশ্চিত করা এবং দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বেতন-মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা।

৯. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়া।

১০. সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব-কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়- এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সৎ প্রতিবেশী সুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ- ইত্যাদির ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

এবং ১১. বিশ্বের সকল নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।

সভাপতির বক্তব্যে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ঐক্যই জনগণের শক্তি। জনগণের ঐক্যের মধ্যদিয়েই আমরা ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আশির দশকের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছি। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, জাতীয় ঐক্য ও স্বৈরাচারী সরকারের ভয়-ভীতিকে হেসে উড়িয়ে দেয়ার শিক্ষা তার কাছেই পেয়েছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষ বারবার প্রমাণ করেছি, ঐক্যের মাধ্যমেই জনগণ তাদের অধিকার আদায় করে নেয়। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, কত বন্দুক, ট্যাংক, কামান নিয়ে ভয় দেখাবে। আমরা ভয়ে ভীত নই। সরকারকে বলতে চাই, আজ আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমরা আজকে এই যে জাতীয় ঐক্য করছি এটা কোনো দলীয় ঐক্য নয়, এটা জনগণের ঐক্য। ড. কামাল বলেন, দেশে বৈধ একটি সরকার গঠনে অবাধ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। যদি বিকল্প থেকে থাকে তাহলে আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল- এসে সেটা বলুক।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। আসুন আমরা রাস্তায় হাঁটতে থাকি, বলতে থাকি- কে এই দেশের মালিক? জনগণকে প্রশ্ন করি, আপনারা কি স্বপ্নের বাংলাদেশ পেয়েছি। আপনারা জনগণের কাছেই জবাব পেয়ে যাবেন। রাজনৈতিক দল ও দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি জাতীয় ঐক্যে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন ঘরে ঘরে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি। সূচনা বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্যের ডাক কোনো দলীয় স্বার্থে নয়, এটা জাতীয় স্বার্থে। কোটি কোটি জনগণের পক্ষ থেকে এই ডাক। এটা কোটি মানুষের উদ্যোগ। এই ঐক্য কোনো দলের স্বার্থে নয়।

জাতীয় স্বার্থে এই ঐক্য করা হয়েছে। এই জোটে যুক্তফ্রন্টের দুই শরিক দলও আছে। আমি অন্যদেরকেও আশা করি এই ঐক্যে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে আজ নবসূচনার দিন। যে জাতি একদিন মুক্তির সংগ্রামে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল, তাদের আজ গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন করতে হচ্ছে এবং আজ সে লড়াইয়ের সূচনা হলো। মুক্তিযুদ্ধে যে দলটি নেতৃত্ব দিয়েছিল তারাই বারবার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তিনি বলেন, আমরা বর্তমান স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে ১০ বছর ধরে লড়াই করছি।

গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। আমাদের হাজারো নেতাকর্মী খুন হয়েছেন, গুম হয়েছেন। লাখো নেতাকর্মী মামলার শিকার এবং তারা বাড়িতে ঘুমোতে পারছেন না। মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা আজ একটি স্বপ্ন দেখছি। স্বপ্নটি মুক্ত বাংলাদেশের, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের। আজ নতুন আঙ্গিকে আমাদের লড়াই শুরু হলো। এই লড়াইয়ে আমাদের মুক্তি মিলবে। আমরা আজ শপথ নিচ্ছি, অধিকার আদায় না করে ঘরে ফিরব না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পতাকাতলে শরিক হতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনও অনেকেই ঐক্য প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছেন। আমরা আহ্বান জানাই, আসুন- ঐক্য গড়ি। আজকের দাবিগুলোকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাই। সবাই এই লড়াই-সংগ্রামে শরিক হই।

জেএসডি সভাপতি আসম রব বলেন, এই মুহূর্তে দরকার, জাতীয় ঐক্যের সরকার। জনগণ কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। নিরাপত্তা ও শান্তি চায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত ঐক্যই ছিল আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঐক্য। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে দলীয় সরকার গঠন করে সে ঐক্যকে হত্যা করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চিরদিনের জন্য বাংলাদেশ থেকে স্বৈরাচারি সরকারকে হঠাতে চাই। আগামীতে যেন কোনো স্বৈরসরকার ক্ষমতায় আসতে না পারে, বাংলাদেশে আর কোনো দলীয় শাসন কায়েম করতে দেব না। পুলিশ প্রশাসনকে আশ্বাস দিয়ে জেএসডি সভাপতি বলেন, আপনারা এদেশেরই, এই মাটিরই সন্তান। আপনাদের দেশত্যাগ করতে হবে না। তবে আপনারা সরকারের অবৈধ কাজে সহযোগিতা করবেন না। তিনি সিভিল প্রশাসনসহ সবার প্রতি এ আশ্বাস দেন এবং আহ্বান জানান। রব তার বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জনগণের নেত্রী আখ্যায়িত করেন এবং কারাগারে তিনি পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন দাবি করে তার মুক্তি দাবি করেন। সেই সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই আত্মপ্রকাশে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা স্মরণ করেন।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতান্ত্রিক ও পরিবর্তনের সুন্দর বাংলাদেশ গঠনে আজকের এই জাতীয় ঐক্য একটি মাইলফলক। আজ আমরা একটি যুগসন্ধিক্ষণে বাস করছি। সংকটের এই সময়ে আশার আলো হিসেবে গঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আমাদের উত্থাপিত ৭ দফা দাবিগুলো পূরণ না হলে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। তিনি বলেন, আমাদের এই ৭ দফার প্রতি ইতিমধ্যে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমরা গণতন্ত্রের জন্য কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে, তাকে নিয়েই আগামী নির্বাচনে যাব। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করে আমাদের ১১টি লক্ষ্য পূরণ করব। এখনও অনেকেই আমাদের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বাইরে রয়েছেন।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। দেশে গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য এ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ হচ্ছে একটি টার্নিং পয়েন্ট। সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন এই বয়সে এসে যে সাহস দেখিয়েছেন এই ঐক্য সৃষ্টিতে তাতে প্রমাণ হয় তিনি বাংলাদেশকে ভালোবাসেন, গণতন্ত্রকে ভালোবাসেন। স্বৈরাচারী সরকারকে সরাতে আমাদের কাছে একটিই অস্ত্র আছে, সেটি হচ্ছে- জাতীয় ঐক্য। এই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করব।

আজকের ঘোষিত লক্ষ্যগুলো আমরা জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করে সবাই মিলে অর্জন করব। ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মুহাম্মদ মনসুরের সঞ্চালনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সংহতি প্রকাশ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বক্তব্য দেন। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে গণফোরামের কার্যকরি সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট আলতাফ হোসেন, অ্যাড?ভো?কেট জগলুল হায়দার, আ ও ম শফিক উল্লাহ, মোস্তাক আহমদ, রফিকুল ইসলাম পথিক রবসহ বিভিন্ন দলের নানা পর্যায়ের শতাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।

-আরবি

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter