জুতাকে জোতো কহা ঠিক কিনা জানি না

ডা. বে-নজীর আহমেদঃ

জোতো সমাচার;
জুতাকে জোতো কহা ঠিক কিনা জানি না; হামারঘে গাঁওয়ে কেহ কেহ পরিশুদ্ধ উচ্চারণের জন্য বা অবজ্ঞা করিয়া জুতাকে জোতো বলিতো বলিয়া ইয়াদ হইতেছে। শিশুকাল হইতে জুতার ক্রম বিবর্তন চাক্ষুষ করিয়া আসিতেছি; কাঠের জুতা, যাহাকে আমাদের ভাওইয়া ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ অন্চলে খড়ম কহিত; কিম্বা রবারের কাদাপ্রুফ বাটার নাম করা গ্রাম্য জুতা; সারা রাস্তা খালি পায়ে হাটিয়া শশুর বাড়ির কান্ছায় আসিয়া পদযুগল ধৌত করিয়া স্কন্ধের ঝুলানো মহামূল্যবান জুতা পায়ে সেন্ধাইয়া শাশুড়ির সমাদরে প্রবেশ এখন প্রায় ইতিহাস।

জুতা পদযুগলে ধারন যে সামাজিক বিশেষ মর্যাদার বিষয় ছিল, তাহার কিন্চিৎ ধারনা পাওয়া যায় কোন কোন রাজ রাজড়ার জোতো বিষয়ক বিধি নিষেধ শুনিয়া; তাঁহার প্রাসাদের সমুখ দিয়া কেহ না যায় জোতো পদযুগলে ধারন করিয়া। আবার উল্টা চলনও আছে যে, জুতা পরিধান কোন কোন অফিস আদালত স্কুল কলেজ বিভিন্ন বাহিনীতে বাধ্যতামূলক। শুনিয়াছি সামরিক বাহিনীর প্যারেড কালীন সময়ে জুতার যত্ন মুখো মন্ডলের চাইতেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ; এবং তাহা এতটাই যে, মুখ মোছার রুমাল দিয়া সৈনিকগণ মুখের চাইতে জুতার যত্ন লয় অধিকহারে, চকচকে রাখে বুটজোতো।

চৈনিক জোতোর বিষয়টি একটু অন্যরকম; রমনীগণের পদযুগল সুন্দর রাখিতে বাল্য হইতে তাহাদের লোহার জোতো পরিধান করিত বলিয়া বাল্যকালে শুনিয়াছি।

অবশ্য পরবর্তী কালে বহু চৈনিক রমনী সংস্পর্শে আসিলেও লৌহজোতোর পদযুগলও দর্শণ হয় নাই; কিম্বা তাঁহাদের পদযুগল যে খুবই ক্ষুদ্র তাহাও মনে হয় নাই। যাহা হউক গতকাল আমারও জোতো বিষয়ক ক্ষুদ্র ঘটনায় বৃহৎ অবতারনা করিতেছি। গতর সচল রাখিতে গতকল্য প্রত্যুষে হোটেলের জিমে গমন করিয়া কিন্চিৎ অপ্রস্তুত হইতে হইলো; যথাযথ জোতো না থাকাত জিম হইতে বাহির হইয়া আসিতে হইলো। যদিও মাঝে মাঝে কেডস্ দেশ বিদেশ যাত্রার সঙ্গী হয়, কিন্তু ছিন্ন হইবার কারনে ইদানীং তাহা ঘটিতে ছিল না। এবারে বাহিরে বাজারে যাইবার জন্য চর্ম স্যান্ডেল লইয়া আসিয়াছি; জিমের এটেয়্যার হইলো ‘কেডস্ পড়িয়া’ ঢুকিতে হইবে। ঢুকিতে যাইয়া জিম ট্রেনার কি কহিল সম্যক না বুঝিয়া ভাবিলাম ‘ স্যান্ডেল খুলিতে হইবে’; সেইমত স্যান্ডেল খুলিয়া ট্রেডমিল ‘মস্করা সাইকেল সারিয়া’ ভারোত্তলনকালে ট্রেনার ফিসফিসাইয়া যাহা বয়ান করিল তাহার মর্মার্থ হইলো, বাহির হইতে হইবে। অপ্রস্তুত না হইবার চেষ্টায় বলিলাম ঠিক আছে বাহির হইতেছি, ‘নেক্সট টাইম’ আসিলে কেডস্ পড়িয়াই আসিব। বঙ্গাল আঁতে কিন্চিৎ ঘা লাগিল, বিকালে বাজারে যাইয়া কেডস্ ক্রয় অগ্রাধিকার পাইল, দেশী সহকর্মী সমেত দলবলে এক জোড়া কেডস্ ক্রয় হইলো। অদ্য প্রত্যুষে ঘুমাক্রান্ত নয়নে স্বকেডস্ বীরদর্পে জিমে গমন করিয়া পারিলে সেই ট্রেনারকে স্বশব্দে জোতা দেখাইয়া ওয়ার্ক আউট করিলাম আধা ঘন্টা খানেক; জোতো সমাচারে বোধকরি কিয়ৎ জয়লাভ ঘটিল। জীবনে বোধ করি এমন ছোট খাট ঘাত প্রতিঘাত জয়পরাজয় ঘটিয়া থাকে; শোধবোধ হয়, জীবন আগাইয়া যায় তবুও।

-এসএম

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter