নজরুলের ভূমিদস্যুতায় অতিষ্ট সিরাজদিখানের মানুষ

নজরুলের ভূমিদস্যুতায় অতিষ্ট সিরাজদিখানের মানুষ

ডেস্ক রিপোর্টঃ

নজরুল ইসলাম, পিতা-মহিউদ্দিন(আব্দুল মকিম) গ্রাম-পো: পাউসার,উপজেলা-সিরাজদিখান, জেলা- মুন্সিগঞ্জ।

অভিযোগ: এলাকার দালাল,জাল জালিয়াতি সহ নানা অপকর্মের হোতা। তার কাজ হলো মানুষের নামে মিথ্যা মামলা করা। আধা শতাংশ জায়গার নাম করে সর্ম্পূর্ণ জায়গার অংশ লিখে নেওয়া। নাম জারীর কথা বলে নামজারী না করা। পরচা সংশোধনীর কথা বলে সংশোধনী না করে দেওয়া, দেওয়ানী মামলায় পরিবারের সদস্য কম দেখিয়ে জারিকারের নিকট হতে অন্য ব্যাক্তি দেখিয়ে নোটিশ গায়েব করা,কোর্টে অন্য এলাকার লোক দিয়ে স্বাক্ষী দিয়ে মিথ্যা স্বাক্ষী দিয়ে এক তরফা রায় এনে দেওয়া। এর জন্য প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে আর্থিক ক্ষতি করা।

এস বিষয়ে গ্রামে কয়েকবার গ্রাম্য সালিশ হলেও তখন আর সে গ্রাম্য সালিশ মানে না। আমরা গ্রামবাসী এর প্রতিকার চাই। সে যেন আর কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ সহ জাল জালিয়াতি করে মানুষের ক্ষতি না করতে পারে। কোর্টের সুমান বৃদ্ধি করেন এবং ওর হাত থেকে জনগণকে বাঁচান।

এ ধরনের বক্তব্য সাদা ২টি কাগজে ৫৩ জনের স্বাক্ষরসহ একটি প্রতিবেদন উক্ত নজরুল ইসলামের নামে পাওয়া গেছে যার সকল অবৈধ, জালজালিয়াতি ও মামলাবাজি কর্মকান্ডে অতিষ্ট।

জানা গেছে অভিযুক্ত নজরুল একজন আইনজীবি সহকারী হওয়ায় আইনের মারপ্যাচে গ্রামের সরল মানুষদের অতি সহজেই সর্বশান্ত করে ফেলছেন। কয়েক শতাংশ জমি কেনার নামে চোখের পলকে দলিলে পুরো অংশ লিখে জমি রেজিষ্ট্রি করানোতে নজরুল অনেক পারদর্শী। এছাড়া জমির দলিল দস্তাবেজ ঘেটে জমির মালিকদের অবস্থান বুঝে দলিল জালেও তিনি বেশ পারদর্শী।

এক অভিযোগে দেখা যায়, জুয়েল নামের এক ভূক্তভোগীর অর্ধ শংতাংশ জমি বিক্রির জন্য তার কাছে গেলে দলিলে ৩ শতাংশ পরিমান জমির পরিমান তুলে নেয়। এ ব্যাপারে ভূক্তভোগি প্রতিবাদ করলে তাকে মারধোর করার হুমকি দেন।

এ ছাড়া অভিযুক্ত নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এলাকার লোকজন নানাভাবে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এরপরও ভূমিদস্যু নজরুল এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের সালিশ অমান্য করেন। এ ছাড়া শেখরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেবব্রত সরকার তাঁর প্যাড়ে নিজে ওই ভূমিদস্যু নজরুলের জমিজমা সংক্রান্ত জালিয়াতি নিরসনে মজলিসের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে বলেন, নজরুল ইসলাম মজলিসের রায় সুষ্টভাবে সমাপ্তির পরও সেই দিনের রায় অমান্য করে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত মুন্সিগঞ্জ এ-১০৭ ধারায় গত ০৮/০৫/২০২২ ইং তারিখে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন যাহার পিটিশন নং ১৭৪/২০২২। চেয়ারম্যান দেবব্রত সরকার মামলায় উল্লেখিত ঘটনাটি ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে বিজ্ঞ আইনজীবিরা বলেছেন, দলিল অনেক সময় জাল হয়ে থাকে। কারণ, অসাধু ব্যক্তিবর্গ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অনৈতিক পন্থা ব্যবহার করে থাকে। তবে জাল দলিল সম্পাদন করলে রয়েছে উপযুক্ত শাস্তির বিধান। কারণ জাল দলিল ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শৃংখলা ভঙ্গের কাজে নিয়োজিত করা হয়ে থাকে।

দলিল জাল-জালিয়াতি করা হলে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ২ ধরনের প্রতিকার রয়েছে।

ফৌজদারী আদালতে জালিয়াতির সাজা:

জালিয়াতির মাধ্যমে কোনো দলিল সম্পাদন করে লোক ঠকানো, প্রতারণা বা অন্যায়মূলক কাজে সহায়তাদান আইনের দৃষ্টিতে একটি গুরুতর অপরাধ। দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪০৬/৪২০ এবং ৪৬৩ থেকে ৪৭৭ ধারা পর্যন্ত জালিয়াতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে এবং দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে।

দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ৪৬৩ ধারা অনুযায়ী জালিয়াতির অপরাধের আবশ্যকীয় উপাদান দুটি- প্রথমত, মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করা। দ্বিতীয়ত, প্রতারণামূলক ইচ্ছা নিয়ে কোন ব্যক্তিকে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে উহা করা। [৪২ উখজ ২৩৮] কোনো লোকের ক্ষতি বা অনিষ্ট করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা দলিল তৈরী করা। মিথ্যা দাবি বা স্বত্বকে সমর্থনের জন্য এই ধরনের দলিল সৃষ্টি করা হয়।

দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ৪৬৪ ধারায় মিথ্যা দলিল প্রণয়নের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে,

প্রথমত, কোনো দলিল কিংবা অংশবিশেষ এমন ব্যক্তি কর্তৃক প্রণীত স্বাক্ষরিত, সিলমোহরকৃত বা সম্পাদিত বলে বিশ্বাস জন্মানোর উদ্দেশ্যে, যা প্রকৃত ব্যক্তি কর্তৃক সম্পাদিত হয়নি;

দ্বিতীয়ত, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর প্রতারণামূলক ভাবে বাতিল করে; তৃতীয়ত, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণামূলক কোনো মাতাল বা মানসিক বিকারগ্রস্থ ব্যক্তি দ্বারা কোন দলিল স্বাক্ষরিত, সিলমোহর বা পরিবর্তন করান, যা বুঝতে অক্ষম, তা হলে এ ক্ষেত্রগুলোতে দলিল জালিয়াতি করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।

এ ধারার দুটো ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি তাঁর নিজ নাম স্বাক্ষর করলেও যদি অন্য ব্যক্তির স্বাক্ষর হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে জালিয়াতি হতে পারে। মৃত লোকের নামে মিথ্যা দলিল প্রণয়ন করা হলে জালিয়াতি হিসেবে গণ্য হবে।

[৪২ উখজ ১৯১] মনু মিয়া বনাম রাষ্ট্র মামলায় বলা হয়েছে, কোনো দলিলকে জাল বলতে হলে অবশ্যই তা অসৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্যে সম্পাদিত হতে হবে। কেননা অপরকে প্রতারিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে কোন দলিল সম্পাদন করলে উহাকে জালিয়াতি বলা যায়।

দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ৪৬৫ ধারায় জালিয়াতির শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি জালিয়াতি করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি দু বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডসহ উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।

দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ৪৬৬ ধারা অনুযায়ী আদালতে নথি বা সরকারি রেজিষ্টার ইত্যাদিতে জালিয়াতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বিচারালয়ের নথিপত্র বা মামলার বিবরণী বলে গণ্য কোনো দলিল বা জন্মনামকরণ বিয়ে বা শবসংক্রান্ত রেজিষ্টার হিসাবে গণ্য বা বা সরকারি সার্টিফিকেট জাল করেন অথবা মামলার কোনো রায়ের কপি জাল করেন, তাহলে দায়ী ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ডসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। এ অপরাধ জামিনযোগ্য নয়।

দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ৪৬৭ ধারানুয়ায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি মূল্যবান জামানত, উইল প্রভৃতি জাল করেন, তাহলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। [১৯ উখজ ৮৬২] দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ৪৬৭ ধারার অধীন দণ্ডনীয় অপরাধ এ রকম জালিয়াতিতে সহায়তার কারণেও হতে পারে।

দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ৪৭০ ও ৪৭১ ধারা অনুযায়ী, জাল বা মিথ্যা দলিল হচ্ছে, যে দলিল জাল প্রক্রিয়ায় সম্পাদন করা হয়েছে এবং যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণামূলকভাবে কোনো জাল দলিল জেনে শুনে মূল দলিল হিসেবে ব্যবহার করেন, তাহলে তিনি দায়ী হবেন এবং দলিল জালিয়াতির অপরাধে দন্ডিত হবেন।

দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ৪৭৪ ধারায় বলা হয়েছে, ৪৬৬ ও ৪৬৭ ধারানুযায়ী প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতির জন্য সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ জরিমানার বিধান আছে।

ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৯৫(১) ধারানুযায়ী, কোনো আদালত এমন কোনো অপরাধের প্রতিকার আমলে নেবেন না, যা কোনো দলিল সম্পর্কে কোনো অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে অভিযোগ করা হয়, যা কোনো আদালতে বিচারধীন।

অর্থাৎ জালিয়াতি সংক্রান্ত কোনো বিচার কার্যচলাকালে আদালতের লিখিত অভিযোগ ব্যতীত কোনো দলিল জালিয়াতি-সংক্রান্ত ধারার অধীন অপরাধের বিচার অন্য আদালত করতে পারেন না।

শিশির

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter