পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় ভোগবাদী পরিকল্পনা পরিহারের আহ্বান

পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় ভোগবাদী পরিকল্পনা পরিহারের আহ্বান

ডেস্ক রিপোর্টঃ

স্বাস্থ্য ও পরিবেশকে নগর পরিকল্পনায় প্রাধান্য দেয়া হলে জলবায়ু বিপর্যয়ের ক্ষতিকর প্রভাব রোধ অনেকাংশেই সহজ হয়ে উঠবে।

এ লক্ষ্যে ভোগবাদী চিন্তা-ভাবনা থেকে বের হয়ে এসে পরিবেশ রক্ষাকে বিবেচনায় নিয়ে মানবজাতির বিভিন্ন চাহিদা পূরণে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।

যান্ত্রিক যানবাহনের উপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে হাঁটা, সাইকেলে যাতায়াতের পরিবেশ গড়ে তোলা, স্বল্প দূরত্বে বিভিন্ন পরিষেবা নিশ্চিত করা, সবুজ পরিসর, উন্মুক্ত গণপরিসর রক্ষা, কৃষি, নগর কৃষি, এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পুর্নব্যবহার ইত্যাদি বিষয়কে নগর পরিকল্পনায় প্রাধান্য দেয়া হলে একটি শহরকে বসবাস উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

এজন্য শুধু সরকার নয়, বরং সকল পেশাজীবি সংগঠন, বেসরকারি সংগঠন, সুশীল সমাজ এমনকি ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেও সচেষ্ট হতে হবে।

আজ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ বিকাল ৪.৩০ টায় দুই দিনব্যাপি ইকোসিটি স্যাটেলাইট কনফারেন্স ২০২১ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

BiodiverCity: Addressing Environment Disasters through Healthier Cities প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ কনফারেন্সটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইকোসিটি বিল্ডার্স এর আমন্ত্রণে বাংলাদেশ ও নেপালের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা নাঈমা আকতার এর সঞ্চালনায় সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন নেপালের ন্যাশনাল রিকনস্ট্রাকশন অথরিটির জয়েন্ট সেক্রেটারি পদ্মা কে মাইনালি, ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর প্রকৌশলী নিভেশ দুগার এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ। সম্মেলনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন হেলথব্রীজ ফাউন্ডেশন অব কানাডা এর আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন।

সমাপনীতে বক্তারা বলেন, বাসযোগ্য শহর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নগর ব্যবস্থাপনায় পরিবতর্ন আনা প্রয়োজন। এ কারণে অযান্ত্রিক যানকে প্রাধান্য দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা, মাঠ-পার্কগুলোকে সকলের ব্যবহার উপযোগী করে তোলা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ইত্যাদি বিষয়ে প্রাধান্য দেয়া আবশ্যক।

নগর এলাকার পাশাপাশি পার্বত্য এলাকায় পাহাড় রক্ষা, হাওড় এলাকায় হাওড় রক্ষায় গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

এ জন্য শুধু স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ে নয়, আমাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে। আমাদের শুধু সম্মেলনে আলোচনা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না বরং কনফারেন্স থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের কাছে এডভোকেসি করতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, সরকার যদি পরিবেশ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভর্তুকি প্রদান না করে, অযাস্ত্রিক যান, নগর কৃষি, জৈব কৃষি, কৃষকের বাজারের মতো কার্যক্রমগুলোকে তথা, সবুজ চাকরি নিশ্চিতে উদ্যোগ গ্রহণ করে সেটি একটা বড় সমাধান হতে পারে। পাশাপাশি মানবজাতির বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা পূরণের নামে আমরা যান্ত্রিক যান বৃদ্ধি, প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি, গাছ কেটে আবাসন তৈরি, পাহাড় ধ্বংস, আবর্জনা ফেলে সমুদ্র ধ্বংস ইত্যাদি কার্যক্রম করছি। এ ধরণের কার্যক্রম পরিহার না করা হলে পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষা অসম্ভব। পরিবেশ রক্ষা করতে হলে আমাদের ভোগবাদী পরিকল্পনা বর্জন করতে হবে।

দুই দিনব্যাপী ইকোসিটি স্যাটেলাইট কনফরেন্স ২০২১ এর মোট ১৭টি সেশনে ৫০ জন অতিথি আলোচক এবং ৩৭টি উপস্থাপনা প্রদান করা হয়। কনফারেন্সের আয়োজক সংস্থা হিসেবে ছিলো বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিইং; নেপাল থেকে ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুলচক ক্যাম্পাস, নেপাল; দিগোবিকাশ ইনস্টিটিউট; সোসাইটি অব এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার্স; এবং আন্তর্জাতিক হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডা ও ইকোসিটি বিল্ডার্স।

-শিশির

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter