প্রণোদনা দরিদ্রদের পুরোপুরি কাজে আসছে নাঃম. খ. আলমগীর

প্রণোদনা দরিদ্রদের পুরোপুরি কাজে আসছে নাঃম. খ. আলমগীর

অথনীতি
বাংলাদেশের সমকালীন কোভিড-১৯ উদ্ভ‚ত বিপর্যয়ের শিকার বিত্তহীন ও মধ্যবিত্তের জীবন ও জীবিকা বাঁচানোর কর্ম প্রচেষ্টার নিরিখে কারও বাস্তবোচিত প্রস্তাব নীতিগতভাবে অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য।

সংস্কার ও পরিবর্তনসমূহ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে সংস্কার কার্যক্রম চালানো গেলে দেশ ও সমাজ সাম্যধর্মী হবে আশা করা যায়।

গত শনিবার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত-এর ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ শীর্ষক গ্রন্থের ওপর একক এক ওয়েবিনার বা ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় এ কথা বলেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমানে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলবিষয়ক সংসদীয় কমিটির নির্বাচিত পরিচালক মহিউদ্দিন খান আলমগীর।

তিনি বলেন, সর্বব্যাপী বৈষম্য কমানোর জন্য নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই জোরালোভাবে ভাবতে হবে। সমাজ থেকে সব ধরনের বৈষম্য নিরসনে প্রয়োজনীয় আইনি ও প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে বৈষম্য দূর করতে হবে।

বাংলাদেশে বৈষম্য আছে, যা দূরীকরণে ড. আবুল বারকাত জোরেশোরে এবং নির্ভয়ে বলছেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা সবাই যদি বৈষম্য নিরসন সম্পর্কে সচেতন থাকি, তাহলে নিশ্চিতভাবে জনকল্যাণের লক্ষ্যে বৈষম্য দূর করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা শনাক্ত করা সম্ভব হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি অধ্যাপক বারকাতের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন যে, কোভিড-১৯ এর ধাক্কা এবং বিশ্ব মহামন্দা দূর করার জন্য সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে, তা দরিদ্রদের জন্য পুরোপুরি কাজে আসছে না। তবে সবার মনে রাখা দরকার যে এই প্রণোদনায় যদি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে কিছুটা বাঁচানো যায়, তাহলে তা জনস্বার্থে প্রযোজ্য হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।

মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেন, ড. আবুল বারকাত বাংলাদেশের সামনের সারির বরেণ্য অর্থনীতিবিদ। তাঁর ‘বড় পর্দায় সমাজ, অর্থনীতি, রাষ্ট্র, ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ বইটি বাংলা ভাষার গত ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে মূল্যবান সৃষ্টি।

সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্র বিষয়ে তাঁর চিন্তা ও বিশ্লেষণ তাঁকে সাহসী চিন্তাবিদের পরিচিতিতে উদ্ভাসিত করেছে। তাঁর গভীর ও ব্যাপ্ত চিন্তাসমূহের প্রকাশ পাওয়া যায় তাঁর শোভন সমাজের সাধারণ তত্তে¡।

গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার ইস্কাটনে সমিতির কার্যালয় থেকে এই ওয়েব সেমিনার পরিচালিত হয়। পুরো অনুষ্ঠানটি অর্থনীতি সমিতির ইউটিউব এবং ফেসবুকে পেজে সরাসরি স¤প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহ-সভাপতি এ জেড এম সালেহ্।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ, সহসম্পাদক শেখ আলী আহমেদ টুটুল। দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন। সেমিনার শেষে শ্রোতা-দর্শক ও আলোচকেরা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।

উল্লেখ্য, শোভন সমাজ, শোভন সংস্কৃতি, শোভন জীবনবোধ, শোভন জীবনব্যবস্থা, শোভন অর্থনীতি, শোভন রাষ্ট্র বিনির্মাণে—জ্ঞানভিত্তিক প্রভাবকের ভ‚মিকা পালন করার লক্ষ্য নিয়ে দেশে-বিদেশে বহুল সমাদৃত এই গ্রন্থটির গুরুত্বপ‚র্ণ বিভিন্ন অংশ নিয়ে চলতি বছরের ১৩ মার্চ জুম প্লাটফর্মে ভার্চ্যুয়াল ওয়েবিনার সিরিজের সূচনা করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

চার মাস ধরে চলা বিভিন্ন পর্বে শোভন সমাজের তত্ত¡কাঠামো; প্রচলিত ম‚লধারার অর্থনীতিশাস্ত্রের অপারগতা ও নতুন অর্থনীতিশাস্ত্রের যৌক্তিকতা; মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনৈতিক অর্থনীতি; ধনী-দরিদ্র-শ্রেণিবৈষম্য ও অসমতা; ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ; বিশ্বায়নের স্বরূপ; দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়নের কাঠামোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সীমানা প্রসঙ্গ; কভিড-১৯ এ ক্ষতির বিশ্লেষণ; শোভন সমাজ-শোভন অর্থনীতি বিনির্মাণের মডেল; সমাজ সমগ্রকের রাজনৈতিক অর্থনীতি; কেমন হওয়া উচিত শোভন সমাজ বিনির্মাণের জাতীয় বাজেট এবং শোভন সমাজ ও ম‚লধারার অর্থনীতিশাস্ত্র বিষয় নিয়ে ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় অংশ নেন দেশ ও বিদেশের প্রায় অর্ধশতাধিক প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, চিকিৎসক, আইনজ্ঞ, রাজনীতিবিদ এবং মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ।

এরই ধারাবাহিতায় গত শনিবার একক আলোচকভিত্তিক নতুন ওয়েবিনার সিরিজের সূচনা করা হয়।

একক আলোচকভিত্তিক এসব ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে থাকবেন অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি, অধ্যাপক ড. কৌশিক বসু, অধ্যাপক ড. হায়দার আলী খান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, অধ্যাপক ড. সুশান্ত দাস, অধ্যাপক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধূরীসহ আরও অনেক গুণী ব্যক্তিত্ব।

চলতি মাসেই অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের এই গ্রন্থটি নিয়ে একটি বিশেষ একক আলোচনায় অংশ নেবেন আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের জনক, বর্তমান সময়ে সর্বজন শ্রদ্ধেয় দার্শনিক ও সমাজ সমালোচক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব আইটির (এমআইটি) ইমেরিটাস অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের চার দশকের গবেষণার ফসল ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ বইটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও মুক্তবুদ্ধি প্রকাশনা।

৭১৬ পৃষ্ঠার এ বইটি সম্পর্কে অভিনন্দন বাণী দিয়েছেন আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের জনক, দার্শনিক ও সমাজ সমালোচক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি।

কৃতজ্ঞতাপত্র, মুখবন্ধ ও মোট ১২টি অধ্যায় ছাড়াও বইটিতে রয়েছে ২৭টি সারণি, ৩৯টি লেখচিত্র, তথ্যপঞ্জি ও নির্ঘণ্ট।

-শিশির

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter