বাজেটে স্থানীয় সরকার-উদ্দিষ্ট কর্মসূচির স্পষ্ট প্রতিফলন থাকতে হবে

বাজেটে স্থানীয় সরকার-উদ্দিষ্টকর্মসূচির স্পষ্ট প্রতিফলন থাকতে হবে

অর্থনীতিঃ
সরকারের সাধারণ প্রশাসনিক ব্যয় যৌক্তিকীকরণের লক্ষ্যে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক করে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতাকে কার্যকরভাবে বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে স্থানীয়ভাবে কর ও ফি আহরণ করে তা স্থানীয় উন্নয়নেই ব্যবহারের মতো স্থানীয় সরকার-উদ্দিষ্ট পদক্ষেপসমূহের স্পষ্ট প্রতিফলন জাতীয় বাজেটে থাকতে হবে।

আজ মঙ্গলবার (৮ মার্চ, ২০২২) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির “বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩ প্রস্তুতি আলোচনা: ঢাকা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়” শীর্ষক জুম মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল আয়োজনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে বাজেট প্রণয়নবিষয়ক এই মতবিনিময় সভায় ঢাকা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, আইনজ্ঞ, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন ও সাংস্কৃৃতিক কর্মী, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণিপেশার প্রতিনিধি আঞ্চলিক সমস্যা ও সম্ভাবনার আলোকে জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য স্থানীয় মানুষের আকাক্সক্ষার কথা তুলে ধরেন।

সভায় অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, দেশে যেভাবে সবকিছু এককেন্দ্রিক বা ঢাকামুখী হচ্ছে তা উন্নয়নের জন্য সহায়ক না। অর্থনীতির মৌলিক কর্মকান্ড থেকে শুরু করে প্রশাসনিক অনেক কর্মকান্ড রাজধানী ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা যুক্তিসংগত ও জরুরি।

তিনি বলেন, আঞ্চলিক বাজেট বরাদ্দে বৈষম্য হ্রাস ও আলোকিত সমাজ-উদ্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়নে জনগণের স্বতঃস্ফ‚র্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সুস্পষ্ট-পরিচ্ছন্ন ধারণাকাঠামোর মধ্যে এ কাজটি তৃণমূল থেকেই শুরু করতে হবে।

অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ আইনুল ইসলাম বলেন, সরকার সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিকেন্দ্রীকরণের কথা বললেও বাজেটের বিভিন্ন আর্থিক ও মেগা বিনিয়োগ প্রকল্পের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত অগ্রসর জেলাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে, যা সামগ্রিক উন্নয়নের প্রতিবন্ধক।

মতবিনিময় সভায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের বক্তারা বলেন, দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৫ শতাংশ হলেও ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতীয় বাজেট বরাদ্দে এই বিভাগ সবসময় তলানিতেই থেকে গেছে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রাপ্ত বিভাগ যেখানে ২০-৩০ শতাংশের উপরে থাকে, সেখানে এই বিভাগের বরাদ্দ কখনো ১০ শতাংশও ছাড়াতে পারেনি।

তারা ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, সড়ক ও রেল যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষিপণ্য-শস্য-মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, নদীভাঙন রোধ, কর্মসংস্থান উপযোগী প্রকল্প, কুটির শিল্প, জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী কাসা শিল্প, কংশ নদী রক্ষা, ভ‚মি মালিকানার ভোগান্তি নিরসন, পাট-আখ-পান আবাদ, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা অধ্যুষিত এলাকার পর্যটন শিল্প না করা এবং হাওর এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দাবি করেছেন।

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহক কমিটির নেতৃবৃন্দসহ অধ্যাপক মোঃ আনোয়ার সাদাত, অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সাত্তার, অধ্যাপক এ জেড এম রেজাউল করিম খান, ড. মো. আবুল হাসেম, ড. মো. হামিদুল ইসলাম, প্রকৌশলী এনায়েতুর রহমান, কমরেড অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত, কামরুন নাহার কাঁকন, মো. আমানউল্লাহ, শংকর সাহা, সজল কোরায়েশী, গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া, আসাদুজ্জামান রওশন, মো. ইমরানউদ্দিন, মো. শরিফুর রহমান, জিয়াউল কবির, কামাল হোসেন, মো. ফজলে এলাহী মাকাম, গিরীন্দ্র কুমার রায়, মনঞ্জুরুল হক গাজী, মুরাদ হোসাইন, মো. ওয়ালিউল্ল্যাহ প্রমুখ এই ভারচুয়াল আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।

-শিশির

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter