বিশুদ্ধ পানি উৎপাদক ৩ কোম্পানী বন্ধ, ৭টি স্থগিত

অনলাইনঃ
তিনটি পানি বোতলজাত করন ও পানি জারকরনের কোম্পানীর অনুমোদন (লাইসেন্স) বাতিল এবং আরো সাত কোম্পানির লাইসেন্সের মেয়াদ স্থগিত করেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।

বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে হাইকোর্টে দাখিল করা হলফনামায় এ তথ্য জানিয়েছে বিএসটিআই।

বিএসটিআইর সহকারী পরিচালক তুহিন আহমেদ হলফনামা আকারে এ প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। বাতিল হওয়া তিন কোম্পানি হলো-আনন্দ ফুড অ্যান্ড বেভারেজের আনন্দ প্লাস (জার), রিয়েল ফুড অ্যান্ড বেভারেজের রিয়েল ফার্স্ট ব্র্যান্ড (জার) এবং বেস্টওয়ান ড্রিংকিংয়ের ‘বেস্টওয়ান।

স্থগিত হওয়া সাত কোম্পানিগুলো-সেফ ইন্টারন্যাশনালের ‘ক্যানি’ ব্র্যান্ড (জার), সিনহা বাংলাদেশ ট্রেড লিমিটেডের এ্যাকুয়া মিনারেল (ছোট বোতল), এএসটি বেভারেজ লিমিটেডের আলমা ব্র্যান্ড (ছোট বোতল), মেসার্স ক্রিস্টাল ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘সিএফবি ব্র্যান্ড (জার), মেসার্স ইউরোটেক ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির ওসমা ব্র্যান্ড (জার), ইউনিটি এগ্রো বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজের এপিক ব্র্যান্ড (জার) এবং ফ্রুটস অ্যান্ড ফ্লেভার্সের ‘ইয়াম্মী ইয়াম্মী ব্র্যান্ড (ছোট বোতল)।

মঙ্গলবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। রিট আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. জে আর খান রবিন। শুনানিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এ রিট আবেদনে পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন করে।

আইনজীবী মুহম্মদ ফরিদুল ইসলাম (ফরিদ) নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের হয়ে আবেদনটি করেন। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পরেও বাজারজাত করলে তিন কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বিএসটিআই। আর লাইসেন্স স্থগিত হওয়া সাত কোম্পানি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বোতলজাত ও জারের পানি বিক্রয়-বিতরণ ও বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বিএসটিআই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নমুনা সংগ্রহের পর ১০টি ব্র্যান্ডের বোতল ও জারের পানি নিম্নমানের বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে কোম্পানিগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। আর তিনটি কোম্পানি নোটিশের জবাব না দেয়ায় তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

নোটিশের জবাব দেয়া সাতটি কোম্পানির লাইসেন্স বিভিন্ন মেয়াদে স্থগিত করা হয়। গত ২১শে জানুয়ারি বিএসটিআই আরেকটি প্রতিবেদনে জানিয়েছিল বাজারে থাকা ১৫টি কোম্পানির পানির মধ্যে পাঁচটির বোতল ও জারের পানি মানহীন। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বিএসটিআই গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়টি আদালতকে জানায়।

বিএসটিআই প্রতিবেদনে বলেছে, গত ১লা জানুয়ারি থেকে ১৮ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের ৬৯টি সার্ভিলেন্স টিম পরিচালনা করে ৩৩ হাজার ৫৭৫টি অবৈধ পানির জার জব্দ এবং ৬৫টি নিয়মিত মামলা করেছে। বাজার থেকে ২৮টি পানির নমুনা সংগ্রহ করে ২২টির প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১২টির পানি মানসম্মত এবং ১০টি নিম্নমানের। এ ১০টি কোম্পানিকে কারণ দর্শাতে বলার পর ৩টির লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। সাতটির লাইসেন্স স্থগিত করেছে বিএসটিআই। লাইসেন্স না থাকায় ৩৬ কারখানার উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে।’ আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন বলেন, ২১শে জানুয়ারি বিএসটিআই আগের প্রতিবেদনে যে পাঁচটি কোম্পানির পানি মানহীন বলে জানিয়েছিল তার মধ্যে চারটির লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। তবে মানহীন শ্রী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয় লিমিটেডের ‘সিনমিন’-এর প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি। বিএসটিআই’র গত ২১শে জানুয়ারির প্রতিবেদনে ‘ইয়াম্মী ইয়াম্মী’, ‘একুয়া মিনারেল’, ‘সিএফবি’, ‘ওসমা’ ও ‘সনামিন’ পানি মানহীন বলা হয়েছিল। গত বছরের ২২শে মে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘প্রতারণার নাম বোতলজাত পানি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে ২৭শে মে জনস্বার্থে রিট করেন আইনজীবী শাম্মী আক্তার।

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter