ব্যার্থতা,,,,,,,,,

ব্যার্থতা,,,,,,,,,

সুমি ইসলামঃ

কখনও কখনও আমাদের জীবনে এমন এক একটা সময় আসে, যখন আমরা প্রতিমুহূর্তে ব্যার্থ হতে থাকি, যে কাজটাই করতে যাই,যে কাজেই হাত লাগাই না কেন সেটাই চরম ভাবে ব্যর্থ হয়।

ব্যার্থতার গ্লানি বয়ে বেড়াতে হয় কতদিন কত মাস কত বছর সেটা কেউ বলতে পারে না। আবার অনেকেই তার বুদ্ধি দিয়ে, কঠোর শ্রম দিয়ে খুব কম সময়ের মধ্যেই ব্যার্থতা কাটিয়ে উঠে। ব্যার্থতাকে পরাজিত করে নতুন জীবন ফিরে পায়।

এই ব্যার্থতার কারনে জীবনে কখনও কখনও একটা সময় আসে যখন সবাই ভুল বুঝতে শুরু করে, সবাই দুরে সরে যায়। নিজের বাবা, মা, আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব,পরিবার পরিজন, প্রেমিক, প্রেমিকা কেউ পাশে থাকে না,পাশে থাকতে চায় না। কেউ তার শক্ত বলিষ্ট হাতটা দিয়ে ব্যার্থ মানুষটার হাতটাকে ধরে টেনে তুলতে চায় না উপরন্তু ধুর ছাই ধুর ছাই করে। এই সময়ে অনেকেই আছে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়, রাস্তায় দেখা হলে না চেনার ভান করে, ফোন করলে রিসিভ করে না অথবা রিসিভ করে ব্যাস্ততার ভান দেখিয়ে দ্রুত লাইনটা কেটে দেয়।আবার খুব কাছের মানুষগুলোও যোগাযোগ রাখা বন্ধ করে দেয়। ব্যার্থতার গ্লানি নিয়ে মাথা নিচু করে মুখ লুকিয়ে চলতে হয় তখন।

সেই সময় অর্থনৈতিক ভাবে চরম বিপর্যয় এর মধ্যে দিয়ে চলতে হয়। কি খাচ্ছি, কি পরছি, কি ভাবে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগাচ্ছি সেটা কেউ খবর নেয় না। অথচ যখন সময় ভালো ছিলো পকেট ভর্তি টাকা ছিলো তখন সবার মধ্যমনি হয়ে থাকতো সে, তখন প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মনে করতো সবাই।সেই মানুষটাকে ছাড়া জমতো না কোন আড্ডা, সম্পূর্ণ হতো না কোন আয়োজন।

সেই ব্যার্থতা বা খারাপ সময়ে অনেক কিছুই বিসর্জন দিতে হয়, নিজের শখ,পরিবারের প্রয়োজন, অসুস্থতা সব কিছু। এমনও হয় যখন জামা কাপড়ের দোকানে ঢুকে নিজের পছন্দের জামাকাপড়াটা নাড়াচাড়া করেও বেরিয়ে আসতে হয়। হাজারটা সেলাই দেওয়া ছেড়া জুতো পায়ে চললেও জুতার দোকানের সামনে দিয়ে যাবার সময় মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দ্রুত হেঁটে যেতে হয়। মাংসের দোকানের সামনে দিয়ে যাবার সময় মনটা ভেঙ্গে যায় সন্তানের মুখে বাবা মায়ের মুখে একটুকরো মাংসের টুকরো তুলে দিতে না পারার যন্ত্রণায়।

উপহার কেনার টাকা থাকে না বলে বন্ধুদের জন্মদিন, আত্মীয়ের বিয়েতে যেতে দ্বিধাবোধ হয়। অনেকে তো আবার দাওয়াত দিতেও ভুলে যায়, আবার অনেকে থাকে যারা ভুলেও ব্যার্থ মানুষটার কথা মনে করে না।

তখন পৃথিবীর সকল মানুষকে দেখেই মনে হয় সবাই ভীষণ ভালো আছে একমাত্র আমি বাদে। মনে হয় পৃথিবীর সকল সুখ থেকে আমি বঞ্চিত। পৃথিবীতে ভালো থাকার যোগ্যতা আমাদের নেই। আমাদের জন্মই হয়েছে ব্যার্থতার গ্লানি বয়ে বেড়াবার জন্য।

এই এত কিছুর পরেও কিছু মানুষ হাসতে জানে, ভালোবাসতে জানে, নিজের কাছের মানুষগুলোকে ভালো রাখতে জানে। নিজের শরীর খারাপ নিয়েও তিনবেলা রান্না করে ঘরের সমস্ত কাজ করতে পারে হাসিমুখে। বৃষ্টিতে ভিজে, লোকাল বাসে বাদুর ঝুলা হয়ে ঝুলে, তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে, সারারাত ওভার টাইম করে সামান্য কিছু টাকা বাঁচিয়ে প্রিয় মানুষদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করে। বৃষ্টিতে ভিজে এসে প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য ঢুরে কাটা শাড়ি কিনে আনে। সারাদিন না খেয়ে সেই টাকা বাঁচিয়ে প্রিয় সন্তানের জন্য কিনে আনে চকোলেট, কিনে আনে খেলনা, নানা রঙের বেলুন। টিউশনির টাকা দিয়ে কিনে আনে প্রেমিকার জন্য কাচেঁর চুড়ি, প্রেমিকের জন্য দামী পারফিউম।

অনেকেই আছে সারাদিন রোদে পুড়ে ট্রেনে বাসে চকলেট চিপস, বই, পানি, চুলকানির ঔষধ, টুথব্রাশ বিক্রি করে রাতের বেলায় ছেলেমেয়ের জন্য বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে যেতে ভোলে না।

এই মানুষগুলোকে দেখলে বোঝা যায় না, তাদের ভেতর ভেতর কত রকমের কষ্ট আছে, কতটা ঝড় বইছে তার জীবনে। পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, প্রিয়জনকে খুশি রাখার জন্য বুকে কষ্ট চেপে মুখে হাসি নিয়ে বেড়াতে জানে এরা।

আবার অনেকেই আছে তারা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজেকে শান্তনা দিতে জানে, নিজেই নিজের কাঁধে হাত রেখে বলতে পারে দেখিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে, একদিন আবার আমাদের সুদিন আসবে, ব্যার্থতাকে কাটিয়ে সব একদিন ভালো হবে।

-শি

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter