মুহিবুল্লাহর অপমৃত্যু!

মুহিবুল্লাহর অপমৃত্যু!

আমিরুল ফয়সল, প্রধান সম্পাদক, বাংলাডেইলিঃ

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন তিনি।

৪৮ বছর বয়সী মুহিবুল্লাহকে রোহিঙ্গারা ‘মাস্টার মুহিবুল্লাহ’ বলে ডাকত। মিয়ানমারে থাকতে তিনি একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন।

জানা গেছে, বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় লাম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একদল দুর্বৃত্তরা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ওই ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরান হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, গুলিবিদ্ধ মুহিবুল্লাহকে উদ্ধার করে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা গণমাধ্যমকে জানান, এশার নামাজের পর লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে এআরএসপিএইচের কার্যালয়ে বসে কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে গল্প করছিলেন মুহিবুল্লাহ। এ সময় আল-ইয়াকিন নামে রোহিঙ্গাদেরই একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্য এসে পরপর পাঁচটি গুলি করে পালিয়ে যায়। মুহিবুল্লাহর বুকে তিনটি গুলি লাগে।

মুহিবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা গণমাধ্যমকে
বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মুহিবুল্লাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। বিষয়টি মুহিবুল্লাহ তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছিলেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনবিরোধী একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মুহিবুল্লাহকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।

২০১৯ সালের ১৭ জুলাই রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে জোরালো আলোচনায় এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ। সে সময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, ‘আমরা (রোহিঙ্গারা) দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাই।’

এর আগে তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ফুটবল মাঠে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার গণহত্যাবিরোধী যে মহাসমাবেশ হয়েছিল, তা সংগঠিত করেছিলেন মুহিবুল্লাহ। গণহত্যাবিরোধী ওই সমাবেশ বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছিল। ওই সমাবেশে মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের নাগরিত্ব প্রদান, নিরাপত্তা, রাখাইনে ফেলে আসা জন্মভিটা ফেরতসহ সাত দফা পূরণ না হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এখনো ওই দাবিতে অনড় রয়েছে রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসে আট লাখ রোহিঙ্গা। সেই সময় বাস্তুচ্যুত অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এ দেশে এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ।

-শি

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter