যেভাবে সমাপ্তি ঘটতে পারে করোনার মহামারি

যেভাবে সমাপ্তি ঘটতে পারে করোনার মহামারি

অনলাইন ডেস্ক:

করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯-এর মহামারি চলছে এখন। বিশ্বের ১৮৭টি দেশ ও অঞ্চলে এই মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। আক্রান্ত হয়েছেন লাখো মানুষ।

বৈশ্বিক মহামারি এর আগেও হয়েছে। মহামারি এর আগেও জয় করেছে মানুষ। ইতিহাসবিদদের মতে, মহামারি সাধারণত দুই ভাবে শেষ হয়ে থাকে। এক. ওষুধ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। দুই. সামাজিকভাবেও মহামারি সমাপ্তি ঘটে যখন মহামারি–সংক্রান্ত ভয় কেটে যায় মানুষের।

জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধবিষয়ক ইতিহাসবিদ জেরেমি গ্রিন বলেন, ফলে এই মহামারি এখন মানুষের একটাই জিজ্ঞাসা, কবে এর শেষ হবে। এই প্রশ্নের মধ্য দিয়ে মানুষ আসলে জানতে চান, এর সামাজিক সমাপ্তি কবে টানা হবে?

কিন্তু এর মধ্যে আরেকটি বিষয় আছে। সেটি হলো, কোনো মহামারি আসলে পুরোপুরি শেষ হয় না। কারণ একটি অসুখকে পরাজিত করা যায় মাত্র। মানুষ একটা সময় উদ্বেগের মধ্যে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে যায় এবং শিখে যায়, অসুখের মধ্যেও কীভাবে বাঁচতে হয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ অ্যালান ব্র্যান্ডের মতে, ‘করোনাভাইরাসের মহামারির সমাপ্তি টানতে মানুষ এই পন্থা ইতিমধ্যেই অবলম্বন করেছে। আমরা লক্ষ করছি অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক শুরু হয়েছে। এর সমাপ্তি নিয়ে তথাকথিত বিভিন্ন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। যেখানে আসলে চিকিৎসাবিজ্ঞান কিংবা জনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত কোনো তথ্য ব্যবহার করা হচ্ছে না। সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে এর সমাধান খোঁজা হচ্ছে।’

কোনো মহামারিতে আক্রান্ত না হয়েও মানুষ এই মহামারির ভয় পেতে পারে। এর উদাহরণ তুলে ধরেছেন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনের চিকিৎসক সুসান মারি। তিনি ২০১৪ সালের ইবোলার উদাহরণ টেনে বলেছেন, ওই সময় আয়ারল্যান্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করেছেন তিনি। ইবোলায় ১১ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল পশ্চিম আফ্রিকায়। কিন্তু আয়ারল্যান্ডে ইবোলার সংক্রমণ দেখা যায়নি। যদিও দেশটির মানুষের মধ্যে এ নিয়ে ভীতি ছিল।

ইবোলা বিগত ২ হাজার বছরে পৃথিবী অনেকগুলো মহামারি প্রত্যক্ষ করেছে। কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে। এ ছাড়া প্রতিটা মহামারি একটি ভয়ের জন্ম দিয়েছে যে এটি আরও বড় আকারে দ্বিতীয় দফায় আঘাত হানতে পারে। এ জন্য অতীতের বিভিন্ন মহামারির উদাহরণ টেনেছেন ইতিহাসবিদেরা। ব্ল্যাক ডেথ, প্লেগসহ মধ্যযুগের মহামারিগুলোর প্রসঙ্গ টেনে তাঁরা বলছেন, যাঁরা এই মহামারি প্রত্যক্ষ করেননি তাঁরা নিজেদের ধন্য মনে করতে পারেন।

এই যে একটি মহামারি আপাতদৃষ্টিতে শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবারও আসতে পারে, এর বড় উদাহরণ প্লেগ। প্রথম ধাপে এটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর তা আবারও আঘাত হেনেছিল। তবে আশাজাগানিয়া ঘটনাও ঘটেছে। যেমন গুটিবসন্তের ক্ষেত্রে। চিকিৎসার মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটেছিল। কিন্তু মহামারির ক্ষত কত বড়, সেটার উদাহরণ স্প্যানিশ ফ্লু। ১৯১৮ সালে এই ফ্লুতে মারা পড়েছিল পাঁচ কোটি মানুষ। মতান্তরে ১০ কোটি।

ইতিহাসবিদেরা বলছেন, করোনাভাইরাসের মহামারিও এভাবেই শেষ হবে। হয় এর ওষুধ আবিষ্কার হবে নয়তো সামাজিকভাবে এর পরিসমাপ্তি টানা হবে। তাঁরা বলছেন, এই ভাইরাসে টিকা কিংবা ওষুধ আসার আগেই মানুষ হয়তো ক্লান্ত হয়ে যাবে।

-এফকে

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter