শর্ষিনার পীরের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের দাবী

শর্ষিনার পীরের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের দাবী

আন্দোলনঃ
সারা দেশের মত ১৯৭১ সালে বরিশাল জেলার পিরোজপুর মহাকুমাধীন স্বরূপকাঠি থানাতেও মহান মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসের এক জঘণ্য গণহত্যা সংগঠিত হয়।

এই গণহত্যায় নেতৃত্ব দেন শর্ষিনার তথাকথিত পীর আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ। এই শর্ষিনার তথাকথিত পীর রাজাকার যুদ্ধাপরাধী আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহকে জিয়াউর রহমানের সরকার ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা পদক দেয়, যেই বছর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মুনীর চৌধুরীকেও স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়।

আরও দুঃখজনক যে সে বছরই আবু সালেহকে শিক্ষা ক্ষেত্রে এই সম্মাননা দেয়া হয় জ্ঞানতাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ-এর সাথে।

প্রজন্ম’৭১ মনে করে, এই স্বাধীনতা বিরোধীর স্বাধীনতা পদক অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিৎ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচীতে শর্ষিনার তথাকথিত এই পীর রাজাকার আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ-এর বিচার ও স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের দাবী জানিয়ে আসছি।

এখনও এই পদক প্রত্যাহার করা হয়নি, তাই সরকারের কাছে আবারও এই দাবী জানাচ্ছি।

আমরা স্মরণ করছি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক আগেই এই তথাকথিত পীরের বিষয়ে জাতিকে সজাগ করেছিলেন (তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের ২৫৬ পৃষ্ঠায়)।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত (পরবর্তীতে স্থগিত) রাজাকার তালিকার ১৫১ পৃষ্ঠায় শাহ আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহর নাম লিপিবদ্ধ আছে।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ও পরে বিভিন্ন পত্রিকান্তরে, দলিলপত্রে ও গবেষণা গ্রন্থে এই কুখ্যাত ব্যক্তির কীর্তি লিপিবদ্ধ আছে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের মে মাসে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সদস্যরা বরিশালের স্বরূপকাঠিতে শর্ষিনার পীর আবু সালেহ-এর বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে গ্রামের পর গ্রামে হত্যা, লুট, ভাংচুর, নারী নির্যাতন করে। এই বাড়ির মাদ্রাসায় রাজাকারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

আজকের এই দিনে পাকিস্তানীদের হাতে শহীদ হন প্রজন্ম ৭১-এর সাধারণ সম্পাদকের পিতা স্বরূপকাঠির স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ কাজী শামসুল হক। এই হত্যার জন্য শর্ষিনার পীর ও ক্যাপ্টেন এজাজের বিরুদ্ধে হত্যা ও দালালীর মামলাও দায়ের করা হয় স্বাধীনতার পর। এইসব তথ্য বিভিন্নভাবে নথিবদ্ধ রয়েছে।

আমরা শহীদের উত্তরসূরিরা মনে করি একজন কুখ্যাত রাজাকার মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে পুরষ্কৃত হওয়া মানে আমাদের শহীদ স্বজনের রক্তের প্রতি সরাসরি অবমাননা। তথাকথিত শর্ষিনার পীর যার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে ও পৃষ্ঠপোষকতায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে লুটতরাজ, অগ্নি-সংযোগ, নারী নির্যাতন ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে সেই নরাধমকে রাষ্ট্র স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করতে পারে তা আমাদের কল্পনারও অতীত! কিন্তু চরম লজ্জা, বেদনা ও ক্ষোভের সাথে আমরা প্রত্যক্ষ করলাম – জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে এদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের পূনর্বাসিতই শুধু করেনি, নানা সময়ে পুরষ্কৃতও করেছে। তারই একটি জ্বলন্ত প্রমাণ স্বাধীনতা বিরোধী শর্ষিনার পীর-এর এই স্বাধীনতা পদক।

আমরা খুব আশাবাদী যে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাস্তবায়ন কারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী শর্ষিনার পীর আবু সালেহর স্বাধীনতা পদক বাতিল করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করবে, যেন তিরিশ লক্ষ শহীদের আত্না শান্তি পায়।

-শিশির

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter