স্যামসাং এর উত্তরাধিকারী এখন জেলে

স্যামসাং এর উত্তরাধিকারী এখন জেলে

আন্তর্জাতিকঃ
দক্ষিণ কোরিয়ার এক আদালত ঘুষ দেয়ার দায়ে প্রযুক্তি কোম্পানি স্যামসাং-এর উত্তরাধিকারী লি জে ইয়ংকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।

এই ঘুষের মামলাটি আরেকটি দুর্নীতি মামলার সূত্র ধরে হয়েছে যেটিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট পাক গান-হে’কে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

লি’র কারাদণ্ডের খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই বাজারে স্যামসাং-এর শেয়ারের দরে ৪% পতন ঘটে।

লি জে ইয়ং কার্যত ২০১৪ সাল থেকেই স্যামসাং-এর প্রধান হিসেবে কাজ করে আসছেন। এখন আদালতের এই রায় ঐ কোম্পানিতে তার ভবিষ্যৎ ভূমিকা সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্তত সাময়িকভাবে তাকে কোম্পানির বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দেয়া নাও হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লি’র কারাদণ্ডের ফলে স্যামসাং-এর মধ্যে নেতৃত্ব শূন্যতা তৈরি হবে যার প্রভাব পড়বে বড় বড় বিনিয়োগ প্রকল্পের ওপর। দক্ষিণ কোরিয়ার পুরো জিডিপির এক পঞ্চমাংশ আসে স্যামসাং থেকে।

“স্যামসাং-এর জন্য এই রায় একটা বড় ধরনের ধাক্কা,” বলছেন সেজং ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কিম দে জং। লি’র বাবা স্যামসাং মালিক লি কুন-হি ২০১৪ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তিনি গত বছর মারা যান।

তার মৃত্যুর পর মনে করা হচ্ছিল স্যামসাং কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ে বড় ধরনের রদবদল ঘটবে এবং উত্তরাধিকার করের বিপুল বোঝা সামাল দিতে লির ছেলেমেয়েরা কোম্পানির সম্পদ এবং মুনাফার কিছু অংশ বিক্রি করতে বাধ্য হবে।

আদালতের দলিল থেকে জানা যাচ্ছে, লি জে ইয়ং নিজে ঘুষ দিয়েছেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পাক গান-হে’কে আভাস-ইঙ্গিতে বলেছেন তিনি যাতে স্যামসাং-এর নতুন প্রধান হতে পারেন তার জন্য প্রেসিডেন্ট যেন তাকে সাহায্য করেন।

ঘুষ প্রদান, অর্থ আত্মসাৎ এবং বেআইনিভাবে আয় করা প্রায় ৭৮ লক্ষ ডলার লুকিয়ে রাখার দায়ে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে।

লির কৌঁসুলিরা বলছেন, আদালতের এই রায়ে তারা হতাশ হয়েছেন।

তার কারাদণ্ডের মেয়াদ কিছুটা কমে যাবে কারণ মামলা শুরুর পর থেকেই তিনি আটক অবস্থায় আছেন। তাকে এখন মোট ১৮ মাস জেল খাটতে হবে।

যেভাবে হয়েছিল ঘুষ লেনদেন

লি জে ইয়ং যখন স্যামসাং-এর নতুন প্রধান হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন তখন থেকেই তার সমস্যা শুরু হয়। তাকে প্রথমবারের মতো গ্রেফতার করা হয় ২০১৭ সালে এক দুর্নীতি কেলেঙ্কারি মামলায়। সে সময় স্যামসাং-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে তারা প্রেসিডেন্ট পাক-এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু চোই সুন-সিল’র দুটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে দুই কোটি ৬৭ লক্ষ ডলার ঘুষ দিয়েছিল। এর বদলে স্যামসাং শাসক দলের আনুকূল্য চেয়েছিল।

সেই সময়টাতে স্যামসাং এর ভেতরে দুটো কোম্পানির একত্রীকরণ ঘটছিল যা ছিল বিতর্কিত এক ঘটনা। সেটা সম্পন্ন করতে গেলে সরকারি পেনশন ফান্ডের সমর্থনের প্রয়োজন হতো। সেই উদ্যোগ সফল হলে স্যামসাং-এর নতুন প্রধানের পদটি লি জে ইয়ং-এরই হতো।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter