ফোক ফেস্টের দ্বিতীয় দিনে মাতিয়েছিলেন যাঁরা

বিনোদনঃ

ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে চতুর্থবারে মতো বসেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক লোক সঙ্গীতের আসর। আই আসরের দ্বিতীয় দিনে মাতালেন যারা।

১. স্বরব্যাঞ্জোঃ
রাজশাহীর স্বরব্যাঞ্জো, যারা প্রথম বাংলাদেশে “কপিলেফট মুভমেন্টের” অভিষেক করেছে। এটি একটি ফোক-ফিউসন ব্যান্ড এবং এই ব্যান্ড তাদের সব গান অব্যবসায়িকভাবে শেয়ার করে থাকে ক্রিয়েটিভ কমন লাইসেন্স-এর মাধ্যমে। ২০১৪ সালে গঠিত হওয়া এই ব্যান্ডের সদস্য বেড়েই চলেছে। স্বরব্যাঞ্জো প্রধান সদস্যরা ঠিক থাকলেও ব্যান্ডে যে কেও সদস্যভুক্ত হতে পারে। এই ব্যান্ড সবাইকে নিজেদের সহচর বলেই ভাবে। স্বরব্যাঞ্জো এই চর্চা সম্ভব হয়েছে কারণ তারা প্রত্যেকে একে অপরের সাথে সম্পর্ককে যেকোনো ব্যবসায়িক সম্ভাবনা থেকে বেশি মূল্যবান মনে করে। স্বরব্যাঞ্জো ভাবাদর্শে বিশ্বাসী যে গানের মাধ্যমে মানুষের প্রতিবাদ নিয়ে কথা বলা যায়।

ব্যান্ডটি গান-বাজনা(২০১৫) এবং হাওয়ার চিঠি(২০১৬) নামে দুটি অ্যালবাম বাজারে না বের করে বন্ধুদের মাঝে বিনামূল্যে কিছু ইপি বের করেছে। দুটো অ্যালবামের গানগুলোসহ তাদের অন্যান্য গান ইন্টারনেটে শেয়ার করেছে, এমনকি ডাউনলোডের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বিনামূল্যে করে দেয়া হয়েছে।
বর্তমান ব্যান্ড সদস্যঃ ভোকাল: বগা তালেব, রপক আহমেদ, আসিফ হাসান নিলয়, রাতুল সরকার বাঁশি/হারমোনিকা: শহিদুল আলম জীবন, বগা তালেব গিটার: বানা রতœ, নিলয় ব্যাস: রুপক আহমেদ, তানভির-আল-আযাদ ভায়োলিন: অধরা শ্রেয়সী অথৈ পারকাশান/ কাহন: সঞ্জয় মল্লিক

২. মাজায
অ্যারাবিয়ান উপদ্বীপ ছোট্ট আইল্যান্ড বাহ্রাইনের প্রগ্রেসিভ ফিউশন ব্যান্ড মাজায গঠিত হয় ২০১৩ সালে। প্রথমদিকে ব্যান্ডটি “মাযাজ” নামে গঠিত হলেও পরবর্তীতে সৃজনশীল এবং সাদৃশ্যের কারণে নাম বদলে করা হয় “মাজায”। এরপর টানা কয়েকবছর তাদের লাইভ পারর্ফমেন্স দিয়ে দর্শকদের মন জয় করার পর ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে মুক্তি পায় তাদের প্রথম সিঙ্গেল। ২০১৭ সালের শুরু দিকে তাদের স্টুডিও রেকর্ড “রিহালা” প্রশংসিত হয় বিশ্বব্যাপী। ইন্সট্রুমেন্টের অ-সাধারণ মিশ্রণের সাথে ফোক প্রগ্রেসিভ মিউজিক মাজাযকে এনে দেয় বিশ্বব্যাপী পরিচিত এবং পরিণত করে বাহ্রাইনের অনন্য মিউজিক গ্রুপ হিসেবে। মাজায সাম্প্রতিকালে অংশগ্রহণ করেন বাহ্রাইনের সবচেয়ে বড় মিউজিক ফেস্টিভাল “স্প্রিং অফ কালচার” এ। বর্তমানে এই ব্যান্ডে রয়েছেন জীহাদ আল হালাল- চেলো, আবদুল্লাহ্ ফয়সাল- পারকাশানস্, সালাহ্ শারাখাত- বেস এবং হামিদ আল সাঈদ – গিটার।

৩. রাঘু দিক্সিতঃ
রাঘুপতি দ্বারকানাথ দিক্সিত, গায়ক- সুরকার, মিউজিক প্রযোজক বর্তমান সময়ে ভারতের লোকসংগীত শিল্পীদের মাঝে জনপ্রিয় নাম। ১৯৭৪ সালে নভেম্বর মাসের ১১ তারিখে এই গুণি শিল্পীর জন্ম। ২০০৫ সালে তৈরি করে রাঘু দিক্সত প্রজেক্ট নামে একটি ব্যান্ড। মর্ডান এবং আন্তর্জাতিক সুরকে সঙ্গী করে রাঘু দিক্সিত প্রজেক্ট পরিবেশন করেন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজসংগীত। রঙিন লুঙ্গি এবং ফতুয়া পরে মঞ্চ মাতানো এই দলটির গানে পাওয়া যায় কান্নাড়া কবিতার অনুপ্রেরণা । রাঘু দিক্সিত প্রজেক্টের গানে- পাওয়া যায় গ্লোবাল মিউজিকের সুর, শব্দ যা কিনা বলে ভারতের শেকড়, সাংস্কৃতির ঐতিহ্য এবং আবেগের কথা। বিবিসির “লেটার উইথ জুলস হল্যান্ড”, “গ্লাসটনবেরি” ফেস্টিভালের মত বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় মিউজিক ফেস্টিভাল মাতিয়ে এবার আসছে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবে। সাম্প্রতিককালে ব্যান্ডটি সিডনী অপেরা হাউসে তাদের শেকড় সন্ধানী গান পরিবেশন করেন। বর্তমানে রাঘু দিক্সিত প্রজেক্ট ব্যান্ডের সদস্যরা হলেন- রাঘুপতি দ্বারকানাথ দিক্সিত, নেরেশ নাথান, জো জ্যাকব, নাভিন থমাস।

৪. লস টেক্সমেনিয়াক্সঃ
তেহানো মিউজিক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ম্যাক্স বাকা ১৯৯৭ সালে লস্ টেক্সমেনিয়াক্স ব্যান্ডটি গঠন করেন। পরবর্তীতে ব্লুস, ফোক, কান্ট্রি, জ্যাজ এবং রক মিউজিকের প্রভাব পাওয়া যায় টেক্সাস শহরে গড়ে ওঠা এই ব্যান্ডটির গানে। ২০১০ সালে “বেস্ট তেহানো অ্যালবাম” বিভাগে জয় করেন সংগীতের সবচাইতে বড় পুরস্কার গ্রামি অ্যাওয়ার্ড। এছাড়াও দুবার স্মিথসোনিয়ান ফোকলাইফ ফেস্টিভালে অংশগ্রহণ করেন লস্ টেক্সমেনিয়াক্স। ব্যান্ড সদস্যদের মধ্যে ম্যাক্স বাকা’কে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম বাহো সেক্সতো বাদক। অপরদিকে জশ বাকা অসাধারণ অ্যাকোর্ডিয়ান বাজানোর সাথে “তেহানো মিউজিক” এর মৌলিক বিষয়গুলো নিজের মাঝে রপ্ত করে নিয়েছেন নিজ ভাষায়। এর নাম দিয়েছেন “টেক্সাস গামবো”। ড্রামার ও মাল্টি ইন্সট্রুমেন্টালিস্ট লরেনযো মার্টিনেয ব্যান্ডের গানে এনেছেন মেক্সিকান-চিকানো আমেরিকান প্রভাব। নোয়েল হার্নান্দেয “তেহানো মিউজিক” চর্চার প্রধান স্থান রিও গ্রান্দে ভ্যালিতে বড় হবার কারণে ব্যান্ডে তার ভূমিকা অপরিসীম। এছাড়াও লস্ টেক্সমেনিয়াক্স এ আছে উইল জে.লস, ফ্লাকো ইয়েমিনেয।

৫. মমতাজ বেগমঃ
মমতাজ বেগম বাংলা লোকগানের এক জনপ্রিয় নাম। ভিন্ন ধারার গান পরিবেশনের জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফোক সম্রাজ্ঞী নামেও বহুল পরিচিত এই শিল্পী। জন্ম ১৯৭৬ সালের ৫ মে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার জয়মন্টব গ্রামে। প্রথমে জীবনে তার বাবা মধু বয়াতির কাছে সংগীতে হাতেখড়ি এরপর তিনি মাতাল কবি রাজ্জাক দেওয়ান এবং শেষে আব্দুর রশীদ সরকারের কাছে গান শিখেন। দুই দশকেরও বেশি তার সংগীত জীবনে ৭০০টিরও বেশি একক অ্যালবাম প্রকাশ প্রায়। মমতাজ বলেন, ‘বাউল গান আমার কাছে আমার পৈতৃক সম্পত্তির মতো মনে হয়। কারণ আমি এ গান আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছি’। কখনোই এ গান থেকে দূরে যেতে চান না। এ গান তার রক্ত-মাংসে মিশে আছে। এই বাউল গান সাধারণ মানুষের গান, গ্রাম বাংলা আর মাটির মানুষের গান। তাদের কথা বুকে ধারণ করে, তাদের কথাগুলোই গানের ভাষায় সবার সামনে উপস্থাপন করেন। বাংলা সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার গানের জুড়ি নেই। এছাড়াও তিনি যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশেই গান গেয়ে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছেন। মমতাজ বেগম জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য হিসেবেও সবার কাছে পরিচিত।

আজ বসবে আসরের তৃতীয় ও সমাপনী দিন। আজকের শিল্পীরা হলেন, সাফকাত আমান আলী, পাকিস্তান, লাস মিহাস, স্পেইন, বাউল কবীর শাহ্, বাংলাদেশ, অর্নব, বাংলাদেশ, নকসী কাঁথা, বাংলাদেশ।

-এসএম

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter