আজিমপুরে কৃষকের বাজার চালু

আজিমপুরে কৃষকের বাজার চালু

কৃষি সংবাদঃ
খাদ্য নিরাপত্তা বা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর বর্তমান সরকার নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের দিকে জোরারোপ করেছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে জনসচেতনতাও তৈরি হয়েছে।

ফলশ্রুতিতে নিরাপদ সবজি চাষ বর্তমানে দেশজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষকদের নিরাপদ চাষে উৎসাহিত করার পাশাপাশি সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাদের পণ্যের সঠিক মূল্য প্রাপ্তি এবং ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ সবজি-ফল প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এলাকাভিত্তিক কৃষকের বাজার এ ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী সমাধান।

আজ ২১ অক্টোবর ২০২২ সকাল ৯.০০টায় নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ডে কৃষকের বাজারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।

আজিমপুর রোডে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার সামনে আয়োজিত কৃষকের বাজারে প্রতি শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সাভারের ভাকুর্তা থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক যাচাইকৃত ১০ জন নিরাপদ চাষী তাদের উৎপাদিত সবজি এবং ফলমূল বিক্রি করবেন।

কৃষকের বাজারটি উদ্বোধন করেন আয়োজনের প্রধান অতিথি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলহাজ¦ হাসিবুর রহমান মানিক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিলুফার রহমান, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসন ২২,২৩,২৬, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। উদ্বোধনী আয়োজনে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বজলুর রশীদ; জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জয়নাল আবেদীন; ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সচিব মানিক বিশ্বাস, ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের ঢাকা দক্ষিণের সিটি কো-অর্ডিনেটর শরীফা পারভীন এবং স্থানীয় এলাকাবাসী।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলহাজ্ব হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নের্তৃত্বে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর আমরা এখন নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি।

নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কৃষকের বাজার এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্যকরী অবদান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

কৃষকের বাজার কার্যক্রমটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং কৃষকদের যেন স্থানীয় হকার বা দোকানীদের থেকে কোন ধরণের অনিরাপদ পরিস্থিতির শিকার না হতে হয়, সে বিষয়ে মাননীয় মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নের্তৃত্বে কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২২,২৩,২৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নিলুফার রহমান বলেন, ২৬ নং ওয়ার্ড একটি জনবহুল এলাকা। ১০ জন কৃষক দ্বারা এলাকাবাসীর নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা কঠিন।

তাই কার্যক্রমটি আরো সুবিস্তৃত করা প্রয়োজন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সকল ওয়ার্ডে কৃষকের বাজার গড়ে তোলা হলে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বজলুর রশীদ বলেন, সবজি চাষে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি মাটি, পানি, বায়ু দূষিত হয় এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশব্যাপী কৃষকদের সবজি চাষে জৈব সার প্রয়োগ এবং পোকা দমনে ফেরোমেন ফাঁদ, আঠালো ফাঁদ ইত্যাদি ব্যবহারে উৎসাহী করছে।

কৃষকদের বাজার ব্যবস্থাপনায় সেভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় তারা পণ্যের সঠিক মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কৃষকের বাজারের মত উদ্যোগগুলো কৃষকদের লাভবান করবে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জয়নাল আবেদীন বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বিশ্বব্যাপী নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে।

ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের আওতায় আমরা এলাকাভিত্তিক কৃষকের বাজার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

কাউন্সিলর কার্যালয়ের সহযোগিতা ছাড়া এ কার্যক্রম সফল করা সম্ভব নয়। কৃষকদের টয়লেট, পানিসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাদি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কাউন্সিলর মহোদয়কে অনুরোধ জানাই।

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে আমাদের জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। বিশেষত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই।

পাশাপাশি ছাদবাগান তৈরিতেও আমাদের জনগণকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। এতে একদিকে যেমন নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা পূরণ হবে, তেমনি নগর অঞ্চলে তাপমাত্রা হ্রাসেও ভ‚মিকা রাখা সম্ভব হবে।

-শিশির

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter