আমাকে তারা সহজভাবে নিতে পারেনি অনেকদিনঃ সোনিয়া গান্ধী

আমাকে তারা সহজভাবে নিতে পারেনি অনেকদিনঃ সোনিয়া গান্ধী

মিলি সুলতানা, নিউইয়র্ক থেকেঃ

ইন্দিরা গান্ধী সামান্য অবসর পেলে গান শুনতেন। তাঁর গান শোনার মোক্ষম সময় ছিলো গভীর রাতে। সোনিয়া গান্ধীর মুখে শাশুড়ি ইন্দিরার গান শোনার বিষয়টা খুব সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছিলো, আমি যখন রাজীবকে বিয়ে করে ভারতে আসি, তখন ভারতীয় জনতার বেশ ক্ষোভ উষ্মার প্রকাশ দেখেছি। সেটা খুব স্বাভাবিক। ভারতীয় জনতা হয়ত মাম্মির (ইন্দিরা) পুত্রবধূ হিসেবে একজন ভারতীয় নারীকেই দেখতে চেয়েছিলো।

আমি ভিনদেশী। আমাকে তারা সহজভাবে নিতে পারেনি অনেকদিন। আমি তাদের চোখেমুখে চাপা রাগ ক্ষোভ অভিমান দেখেছি। মন খুব খারাপ হত। কিন্তু মাম্মি আমাকে ছায়ার মত আগলে রাখতেন। তখন তিনি তুমুল জনপ্রিয় নেত্রী। মাম্মি আমাকে সান্ত্বনা দিলেন, মন খারাপ কোরোনা। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখো। আজ যারা তোমার দিকে অপরিচিতের মত তাকাচ্ছে, একদিন তারাই তোমাকে ভালোবাসা জানাবে সামনে এসে।

মাম্মির প্রেডিকশন সত্যি হয়েছিলো। যেদিন তাঁকে হত্যা করা হয় আমি খুব অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। আমার একান্ত পৃথিবীর প্রায় সবটুকু জুড়ে ছিলেন মাম্মি। মাম্মিকে হারিয়ে আমি অসহায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। তখন ভারতীয় জনতা আমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসা জানিয়েছিলো। তারাও বুঝেছিলো, মাম্মি আর রাজিব ছাড়া আমার কেউ নেই।

মাম্মি গান শুনতেন আমিও তাঁর সাথে গান শুনতে চাইতাম। যদিও আমি ভালোভাবে হিন্দি বুঝতাম না। একদিন দেখলাম লাইব্রেরি রুমে লো ভলিউমে তিনি একটি সুমধুর গান শুনছিলেন। আমি ভেতরে ঢুকলাম। তিনি রিভলভিং চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে গানটি শুনছিলেন। আমি গানের বিস্তারিত জানতে চাইলাম। তিনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝে গেলেন আমিও গানটি পছন্দ করছি। গানের সাউন্ড বাড়িয়ে দিলেন। খুব সুন্দর সেই গান। ইক প্যায়ার কা নাগমা হ্যায়…… জিন্দেগী অউর কুচভি নেহি তেরি মেরি কাহানি হ্যায়।

মাম্মির কাছে জানতে পেরেছি লতাজি গেয়েছিলেন গানটি। আমার শখ ছিলো লতাজিকে একটু জড়িয়ে ধরতে। মাম্মি আমার সেই শখ দুইদিন পরে পূরণ করে দিলেন। লন্ডনের রয়েল অ্যালবার্ট হলে পারফর্মেন্স করে দেশে ফিরেছিলেন লতাজি। মাম্মি সেক্রেটারিকে না বলে সরাসরি নিজেই লতাজিকে ফোন করলেন। আমার ভালোলাগার কথা জানালেন লতাজিকে। আমার সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিলেন।

পরদিন বিকেলে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। রাজিব বলল মাম্মি আমাকে বাগানে ডাকছেন চা খেতে। আমি গেলাম, দেখলাম চেয়ারে বসে মাম্মি লতাজি পরস্পর গল্প করছেন। আমরা একসঙ্গে চা খেলাম। কিছুক্ষণ গল্প করলাম। লতাজি খালি গলায় আমাকে সেই গানের কিছু অংশ গেয়ে শোনালেন। আমার হৃদয় জুড়িয়ে গিয়েছিল লতাজির সুরের মাধুর্যতায়। আবেগে আমার চোখে জল এলো —মাম্মির ভালোবাসা স্নেহ মমতা দেখে। আমার জন্য তিনি সবকিছু করেছেন। নিজের মেয়ের মত আদর করতেন আমাকে।

-শিশির

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter