‘এফবিসিসিআই টেক সি’ প্রযুক্তি কেন্দ্র চালু

‘এফবিসিসিআই টেক সি’ প্রযুক্তি কেন্দ্র চালু

অর্থনীতিঃ
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা কাজে লাগিয়ে সিএমএসএমই (কটেজ, মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ) এবং স্টার্টাপের মতো ব্যবসায়কি উদ্যোগের ভিত্তি সুদৃঢ়করণের উদ্দেশ্যে নিয়ে ‘এফবিসিসিআই টেক সি’ নামের একটি প্রযুক্তি কেন্দ্র চালু করেছে ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।

টেক সির মূল লক্ষ্য হলো স্টার্টাপের পরিচর্যা এবং ‘ইমপ্যাক্ট টেক প্রেন্যুয়ার™’ তৈরি, যারা ডিজিটাল ইকোসিস্টেসম তৈরি, সাধারণ মানুষের সামাজিক সমস্যার সমাধান, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

আজ (৬ ডিসেম্বর) রোববার মতিঝিলে এফবিসিসিআই আইকন টাওয়ারে এর উদ্বোধন করা হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনকে সামনে রেখে এটি চালু করা হচ্ছে, যা এফবিসিসিআই ইমপ্যাক্ট ৪.০ (২০২০) এর অংশ।

এফবিসিসিআই টেক সি’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, এমপি।

এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের মাননীয় প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম। এফবিসিসিসিআইয়ের উপ-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফেরদৌস (অব.) এনডিসি, পিএসসি সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ‘টেক সি’ নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেন এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা সোনিয়া বশির কবির। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর অন্টারিও ইনস্টিটিউট ফর স্টাডিজ ইন এডুকেশনের (ওআইএসই) এলিজাবেথ রিজ জনস্টোন, ওআইএসই’র কন্টিনিউইং এন্ড প্রফেশনাল লার্নিংয়ের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর (ইন্টারন্যাশনালাইজেশন অ্যান্ড ইনোভেশন) মাইকেল ক্যাসিডি; অ্যাক্সিলারেটিং এশিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা আমরা নাইডু এবং ম্যাসাচুয়েট ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজির (এমআইটি) সিনিয়র অফিসার শ্যারন বর্ট। সমাপনী বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনতাকিম আশরাফ, ভাইস প্রেসিডেন্ট রেজাউল করিম রেজনু, মীর নিজাম উদ্দীন, দিলীপ কুমার আগারওয়াল, নিজামুদ্দিন রাজেশসহ পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, এমপি বলেন, এফবিসিসিআইএর এই উদ্যোগ ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয় রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও ৪র্থ শিল্প বিল্পবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিজেকে প্রস্তুত করছে। প্রযুক্তি, সহযোগিতা, বিশ্বায়নের ধারনার মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য আজকের এই উদ্যোগ দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বার্ষিকী এমন সুন্দরভাবে উদযাপনের জন্য ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইকে আমি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি বলেন, অগ্রগামী ও দূরদর্শী চিন্তার জন্য আমি এফবিসিসিআইকে অভিনন্দন জানাই। আরও অভিনন্দন জানাই এফবিসিসিআই টেক সি-এর সফল উদ্বোধনের জন্য। ভিশন ২০২১, ২০৪১ এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ভিশন অর্জনের জন্য তথ্য-প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশ আমাদের জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। এজন্য আমাদের সমৃদ্ধ ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি খাতের প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের মাননীয় প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সক্ষমতা নির্ভর করছে প্রযুক্তি খাতের বিকাশ এবং উদ্ভাবনশীলতার ওপর। ডাটা নির্ভর উদ্ভাবন দেশজুড়ে ব্যবসায়ির উদ্যোগের সফলতার ভিত্তি। বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি রাজত্ব করলেও গতানুগতিক সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক খাতে এর ব্যবহার গ্রহণযোগ্যতা এবং ব্যবহার এখনো বেশ ধীর।

তবে কোভিড-১৯ জনিত উদ্ভত পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে ডিজিটালাইজেশনের বড় ধরনের জোয়ার এসেছে।এর ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থসংক্রান্ত খাতগুলো প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে ডিজিটালাইজেশনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয় এবং প্রযুক্তি আত্মীকরণে ইতিমধ্যে বড় ধরনের সাফল্য দেখিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলদেশগড়ে তোলার সুবাদে এটি সম্ভব হয়েছে।

এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা সোনিয়া বশির কবির বলেন, এফবিসিসিআই টেক সি স্টার্টাপ চালুর প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ, এজি টেক (কৃষি প্রযুক্তি), ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (ফিন টেক), মেড টেক (স্বাস্থ্য প্রযুক্তি), এড টেক (শিক্ষা প্রযুক্তি), ই কমার্স, প্রান্তিক পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড নির্ভর স্মার্টসিটি চালুসহ নানা বিষয়ে কাজ করবে। এই কেন্দ্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়ন, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত, ইন্টারনেট অব থিংস তৈরি, সরকারি-বেসরকারি খাতে ব্লকচেইন প্রযুক্তির আত্মীকরণ, ডাটা অ্যানালাইটিকস, মেশিন লার্নিং, অ্যাপালাইড স্কিলে দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

স্টার্টাপকে প্রশিক্ষিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুয়েটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), সিঙ্গাপুরের অ্যাক্সিলারেটিং এশিয়া, কানাডার সেনেকা কলেজ এবং ইউভার্সিটি অব টরেন্টোর সঙ্গে চুক্তি করেছে এফবিসিসিআই।

এফবিসিসিআই টেক সি প্রযুক্তির সার্বজনীনতা নিশ্চিত করে স্টার্টাপকে পরিপক্ক হয়ে উঠা এবং উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করে এমন রীতিনীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে। এছাড় নীতি নির্ধারকসহ সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করার জন্য গবেষণায় পৃষ্ঠপোষকতা এবং স্টার্টাপের জন্য তহবিল সংস্থানে ভেঞ্চার উইং তৈরি নিয়ে কাজ করবে এফবিসিসিআই টেক সি।

ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর অন্টারিও ইনস্টিটিউট ফর স্টাডিজ ইন এডুকেশনের (ওআইএসই) এলিজাবেথ রিজ জনস্টোন বলেন, এফবিসিসিআই টেক সি ‘ইমপ্যাক্ট টেক প্রেন্যুয়ার™’ তৈরি করবে, যারা ডিজিটাল ইকোসিস্টেসম তৈরি, সাধারণ মানুষের সামাজিক সমস্যার সমাধান, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

অ্যাক্সিলারেটিং এশিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা আমরা নাইডু বলেন, এই উদ্যোগে শামিল হতে পেরে আমরা আনন্দিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, আমাদের সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ ডিজিটাল অর্থনীতি তৈরিতে জোরালো ভূমিকা রাখছে।

-শিশির

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter