বিশ্বজিৎপুত্র:বেসামাল জীবনযাপন এক ঝটকায় জীবন বিনাশ

মিলি সুলতানা, কুইন্স, নিউইয়র্ক থেকেঃ

ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন থাকে। তারা পড়ালেখা করে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। মা বাবার স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু কষ্টের কথা হল, ইয়ং জেনারেশন তাদের জীবনকে নিয়মনীতির বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। বেসামাল জীবনযাপন করে নিজের জীবন এক ঝটকায় বিনাশ করে দিচ্ছে। শুধু নিজের জীবন নয়, অন্যের জীবনকেও শেষ করে দিয়েছে। সঙ্গীত তারকা কুমার বিশ্বজিৎ ও তার পরিবার এখন বিধ্বংসী ট্রমায় আছেন।

বিশ্বজিৎ তার স্ত্রী নাঈমা সুলতানা রত্নাকে নিয়ে কানাডার পথে আছেন। ফেসবুকে আমাদের গণ্যমান্য কয়েকজন ভাইবোনদের দেখলাম তারা নিবিড় কুমারের জন্য কষ্ট প্রকাশ করছেন। নিবিড়ের সাথে বাকি তিনজনের জন্য তাদের মধ্যে কোনো কষ্টের প্রকাশ দেখলাম না।

নিবিড় কুমারের ভায়োলেন্ট রেকলেস ড্রাইভিংয়ের কারণে তিন তিনটি তরতাজা প্রাণ ঝরে গেল। দীপ্ত’র মা কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলেই ছেলেকে ডাকছেন আবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। অ্যাঞ্জেলার মায়ের অবস্থাও তাই। নিবিড় কুমারের দায়িত্বহীন ড্রাইভিং তিনটা পরিবারকে সারা জীবনের কান্নায় অভ্যস্ত করে দিয়েছে। স্টুডেন্টরা উইকেন্ড বাদ দিয়ে উইকডেজে কেন রাত সাড়ে এগারোটায় রোড ট্যুরে বেরিয়েছিল? সোমবার তো তাদের ঘোরাঘুরি করার কথা নয়!! যতদুর জানি রাত নয়টার পর স্টুডেন্টদের জন্য এসব প্রোহিবিটেড থাকে। তাহলে নিবিড় কেন ওদেরকে নিয়ে রোড ট্রিপ মেরেছে? ভাবতে খুবই কষ্ট লাগছে নিবিড় এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছে।

আদৌ সে তার মা বাবার বুকে ফিরতে পারবে কিনা কেউ জানেনা। ওর শরীরের ৭৫% আগুনে পুড়ে গেছে। কয়েকটা সার্জারী হয়েছে, আরও হবে কয়েকটা। কানাডা ফোন করে জানতে পারলাম, মৃতদের বন্ধু পরিচিতরা হাসপাতালে গেলেও পুলিশ তাদেরকে লাশের কাছে যেতে দিচ্ছেনা। পুলিশ এটাকে “ভায়োলেন্ট কলিশন” বলে মন্তব্য করেছে। অন্টারিও পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ঘটনার তদন্ত করবে। অ্যাঞ্জেলা শ্রেয়াস বাড়ৈ’র বাবা কানাডার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। অ্যাঞ্জেলার মায়ের ভিসা নেই বলে তিনি যেতে পারছেন না।

কুমার বিশ্বজিৎ তার ছেলেকে কানাডা পড়তে পাঠিয়েছেন। কিন্তু ব্র‍্যান্ড নিউ বিএমডব্লিউ কিনে ছেলের হাতে চাবি দেয়ার আগে একটু ভাবা উচিত ছিল, এত অল্প বয়সে বিএমডব্লিউ’র সাইড ইফেক্ট নিয়ে। ছেলেকে ক্যারিয়ার গড়তে পাঠিয়েছেন। বখে যাওয়ার জন্য পাঠাননি। নিবিড় কুমার যদি বেঁচে ফেরে তাকে পুলিশের ইনভেস্টিগেশনের মুখে পড়তে হবে। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স সাসপেন্ড হতে পারে।

কানাডায় গাড়ি চালানোর জন্য আর ইললিজিবল হবেনা নিবিড় কুমার। যেসব বাবা মা তাদের সন্তানদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠান, তারা দয়া করে ঠান্ডা মাথায় দশবার ভেবে তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন। সন্তানকে এভাবে হাতছাড়া করবেন না। সন্তানকে বিদেশে পাঠিয়ে আপনারা তাদেরকে আপনাদের জীবন থেকে হারিয়ে ফেলছেন। যা খুবই মর্মস্পর্শী। এমন মর্মান্তিক পরিণতি আর কারো যেন না হয়।

মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি- নিবিড় কুমারকে বাঁচিয়ে দিন। ওর মা বাবার বুকে ওকে ফিরিয়ে দিন।

-ফটিক

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter