অর্থনীতিঃ
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা ও কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাত মোকাবিলা করে শোভন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দেশের বাজেট কাঠামো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসিক্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত ‘শোভন সমাজ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় বাজেট কাঠামো কেমন হওয়া উচিত?’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল এক আলোচনায় তাঁরা এই তাগিদ দেন।

গতকাল সন্ধ্যায় গণমানুষের অর্থনীতিবিদ-সমাজ গবেষক অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত রচিত ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ গবেষণাগ্রন্থের ওপর ১৩ সিরিজের ওয়েবিনারের (ভার্চ্যুয়াল সেমিনার) ১২তম পর্বে প্যানেলিস্ট হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ব্র্যাক শ্বিবদ্যিালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. সালহেউদ্দীন আহমদে, বাংলাদশে একাডেমি ফর সিকিউরিটি মার্কেট মহাপরচিালক অধ্যাপক ড. তৗেফকি আহমদ চৌধূরী এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ।

ড. সালহেউদ্দনি আহমদে, বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা হয়ে গেছে। অতীতের অনেক বাজেটের মতো এই বাজেটও ছিল গতানুগতিক, গত বছরের প্রণীত বাজেটেরই ধারাবাহিকতা। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা ও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিপর্যয়কর অভিঘাতসৃষ্ট দারিদ্র্য বৃদ্ধি এবং খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যা নিরসনে তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব এই বাজেট রাখতে পারবে না।

তিনি বলেন, সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটে গাণিতিক হিসাবকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সব সেক্টরে কিছু কিছু অর্থবরাদ্দের চেষ্টা হয়। কিন্তু বাস্তবায়নের বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা থাকে না। বাস্তবায়নের কৌশল সম্পর্কেও তেমন কোনো ধারনা দেওয়া হয় না। জাতীয় বাজেটে ব্যবসায়ী, বড় এবং মাঝারি শিল্পকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কয়েকটি খাতের জন্য বিশেষ অর্থবরাদ্দ দেয়া হয়।

কিন্তু বছর শেষে দেখা যায়, টাকা খরচ হয়নি। অর্থাৎ টাকা দিলেই হবে না। কর্মতৎপরতা এবং সক্ষমতা যদি না বাড়ে, তাহলে বরাদ্দ বাড়িয়ে লাভ হবে না। অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতার সমস্যা এখনো আছে। এসব সমস্যা দূর না হলে বাজেট বাস্তবায়ন বেশ কঠিন।

সাবেক এই গভর্নর মনে করেন, করোনার কারণে দেশে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব অনেক বেড়েছে। কিন্তু বাজেটে বিষয়গুলো তেমন গুরুত্ব পায়নি। এসব বিষয়েই মনোযোগটা বেশি দরকার ছিল। বাজেটে কৃষিজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ কিছু নেই। তাই এ বাজেটকে জনবান্ধব কিংবা দরিদ্রবান্ধব বাজেট বলা যাবে না

অধ্যাপক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, জাতীয় বাজেটে রাজস্ব আহরণটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতি বছরেই রাজস্বে একটা ঘাটতি থেকে যায়। বাজেট প্রণয়নের নীতি-কৌশল পরিবর্তন না করলে আগামী বাজেটগুলোতেও এ অবস্থা চলবে। কারণ, ঘাটতি নিরসনে বড় কোনো উদ্যোগ থাকে না। করোনাভাইরাসের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ কম। এ অবস্থায় সরকারি বিনিয়োগ বাড়ালে বেসরকারি বিনিয়োগও উজ্জীবিত হবে।

আজ সন্ধ্যায় ৭টায় ঢাকার ইস্কাটনে সমিতির কার্যালয় থেকে এই ওয়েব সেমিনার পরিচালিত হয়। পুরো অনুষ্ঠানটি অর্থনীতি সমিতির ইউটিউব এবং ফেসবুকে পেজে সরাসরি সম্প্রপ্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির র্কাযনর্বিাহক কমটিরি সদস্য নছোর আহমদে।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ, সহসম্পাদক শেখ আলী আহমেদ টুটুল। দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন। সেমিনার শেষে শ্রোতা-দর্শক ও আলোচকেরা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।

উলে­খ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের চার দশকের গবেষণার ফসল ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ বইটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও মুক্তবুদ্ধি প্রকাশনা।

৭১৬ পৃষ্ঠার এ বইটি সম্পর্কে অভিনন্দন বাণী দিয়েছেন আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের জনক, দার্শনিক ও সমাজ সমালোচক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি। কৃতজ্ঞতাপত্র, মুখবন্ধ ও মোট ১২টি অধ্যায় ছাড়াও বইটিতে আছে ২৭টি সারণি, ৩৯টি লেখচিত্র, তথ্যপঞ্জি ও নির্ঘণ্ট।

-শিশির

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily