এই প্রথম নওগাঁর সন্তান জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য মনোনীত

এই প্রথম নওগাঁর সন্তান জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য মনোনীত

খেলাধূলাঃ
আশি’র দশকের কথা বলছি। খেলাধূলা ছিলো পড়ালেখার বিরাট অন্তরায়। তখনকার অভিভাবকরা বলতেন, বিকালে খেলার মাটে গেলেই সন্ধ্যায় পড়ালেখার সময় ঘুুম পায় ছাত্রদের। তাই খেলাই বাদ। ক্লাসে ফার্ষ্ট হবে, ডাক্তারী পড়বে, নামকরা ডাক্তার হবে, ইন্জিনিয়ার হবে, ছেলে দেশবিদেশ ঘুরবে। নানান কিছু আবিস্কার করবে ছেলে।

এলাকার পাড়া-মহল্লায় বাবা মায়ের বেশ সুমামের সৌরভ ছড়াবে। লোকজন বলবে- অমুক ডাক্তারের বাবা-মা। এই সব বাধা অতিক্রম করে নওগাঁ জেলা স্কুলের মেধাবী খেলোয়াড় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)’র বাছাই পর্বে নওগাঁর ক্যাম্পে হকি গ্রুপে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যান আলমগীর আলম। সেই সুযোগ আর হাতছাড়া করেননি আলামগীর।

নওগাঁ জেলা স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক ইসমাইল স্যারের প্রিয় ছাত্র আলমগীর সেই সময়ে দক্ষ এ্যাথলেট ছিলেন। ভালো ফুটবলারও ছিলেন। এ্যাথলেটে আলমগীর নানান ইভেন্টের পুরস্কারে ভরে দেন জেলা স্কুলের সুনামের থলে।

নওগাঁর কৃতি সন্তান এই খেলোয়াড় আজও খেলার সঙ্গেই আছেন। বিকেএসপিতে পড়াশুনা শেষ করে সেখানেই শিক্ষকতা করছেন। দেশের সনামধন্য ক্লাবেও দীর্ঘদিন খেলেছেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল হকি দল, আবাহনী হকি দল, এমনকি জাতীয় দলের হকির ক্যাপ্টেইন ছিলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে খেলোয়াড় হিসেবে ভ্রমনের সুযোগ হয়েছে তাঁর।

জয়ের পর উল্লাসে আলমগীর

ইতিপূর্বে ১১ উপজেলার নওগাঁ জেলার কোন খেলোয়াড় জাতীয় পুরস্কার পাননি। যে পুরস্কারে ভূষিত হতে যাচ্ছেন আলমগীর আলম। ২০১৩ সাল থেকে অদ্যাবধি ৮৮ জন ক্রীড়াব্যক্তিত্বকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সেই মেধাবী তালিকার একজন আমাদের আলমগীর।

শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।

জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে সাবেক ফুটবলার শহিদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল (মরণোত্তর)। ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু সাফ গেমসে স্বর্ণজয়ী বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জুয়েল রানা, গোলকিপার মো. মহসিন, কাজী আনোয়ার হোসেন, খন্দকার রকিবুর রহমান, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, ইলিয়াস হোসেনদের সঙ্গে পুরস্কার পাচ্ছেন সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী ফুটবলার আরিফ খান জয় এবং বরুন বিকাশ দেওয়ানও।

আটবারের দ্রুততম মানবী সুলতানা পারভীন লাভলি, ফরহাদ জেসমিন লিটি, রোকেয়া বেগম খুকি, সাঈদ-উর-রব, মিউরেল গোমেজ ও বেগম কামরুন্নেসার নাম রয়েছে চূড়ান্ত তালিকায়।

সাঁতারু মাহফুজা রহমান তানিয়া, নিবেদিতা দাস, প্রয়াত সংগঠক আফজালুর রহমান সিনহা ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মইনুল ইসলাম, মোজাফফর হোসেন পল্টু ও তার সহোদর এনায়েত হোসেন সিরাজ, বিওএ’র মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা পাচ্ছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।

ক্রিকেটে খালেদ মাহমুদ সুজন, হাবিবুল বাশার সুমন, আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও জালাল ইউনুসের হাতেও শোভা পাবে এই পদক।

২০১৩ থেকে ২০২০’র ৮৮ জন ক্রীড়াব্যক্তিত্বের নাম বাছাই করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। পরে তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটি ৮৮ জনের নাম চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দেয়। এ তালিকা প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। এখন প্রজ্ঞাপন জারির অপেক্ষায়।

২০১৭ সালের জন্য টেবিল টেনিসে পুরস্কার পাচ্ছেন প্রয়াত সংগঠক এটিএম শামসুল আলম আনু। কিন্তু কর্মের স্বীকৃতি নিজ হাতে নিতে পারলেন না।

২০১৮ সালে পুরস্কার পাচ্ছেন বেমানান এক ক্রীড়া সংগঠক। উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো কীর্তি নেই তার। ২০১৯ সালের জন্য মনোনীতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার, প্রতিথযশা ক্রীড়া সংগঠক তানভীর মাজহার তান্না।

২০২০ সালে ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন নয়জন। এদের মধ্যে খেলোয়াড় কোটায় ঢুকে পড়েছেন বিতর্কিত একজন। যার ক্যারিয়ারে জাতীয় পর্যায়ের কোনো পুরস্কার নেই বললেই চলে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ১৯৭৬ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের প্রবর্তন করেন। ওই বছর আটজনকে দেওয়া হয়েছিল ক্রীড়া পুরস্কার। ছয় বছর নিয়মিত দেওয়ার পর ১৯৮২ সালে বন্ধ হয়ে যায় জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। ১৯৯৬ সালে আবার শুরু হয় পুরস্কার প্রদান।

বিকেএসপিতে

২০১২ সাল পর্যন্ত ২২৯ জন ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক পেয়েছেন এ পুরস্কার। তবে ২০০৮ সালে সাবেক সেনাপ্রধান ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জেনারেল (অব.) মঈন উই আহমেদকে পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তার অনুপস্থিতির কারণে ওই পুরস্কারটি দেওয়া হয়নি। একটি স্বর্ণপদক, সনদপত্র, নগদ এক লাখ টাকা ও একটি ব্লেজার দেওয়া হয় পুরস্কারপ্রাপ্তদের। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমরা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। তারিখ নির্দিষ্ট হলেই আট বছরের পুরস্কার এক অনুষ্ঠানেই দেওয়া হবে।’

পুরস্কার পাচ্ছেন যারা

  • ২০১৩

মুজাফ্ফর হোসেন পল্টু (সংগঠক)

মো. ইলিয়াস হোসেন (ফুটবল)

খালেদ মাহমুদ সুজন (ক্রিকেট)

মো. শাহ্জাহান মিজি (সাঁতার)

রোকেয়া বেগম খুকী (অ্যাথলেটিক্স)

বেগম জ্যোৎস্না আক্তার (অ্যাথলেটিক্স)

মুনিরা মোর্শেদ খান (টেবিল টেনিস)

ভোলা লাল চৌহান (স্কোয়াশ)

কাজী মাহতাব উদ্দিন (মরণোত্তর) (সংগঠক)

মহিউদ্দিন আহমেদ (অব.) (সংগঠক)

সামশুল হক চৌধুরী (সংগঠক)

২০১৪

ইমতিয়াজ সুলতান জনি (ফুটবল)

মো. এহসান নাম্মি (হকি)

মো. সামছুল ইসলাম (সাঁতার)

সাঈদ-উর-রব (অ্যাথলেটিক্স)

মিউরেল গোমেজ (অ্যাথলেটিক্স)

বেগম কামরুন নেছা (অ্যাথলেটিক্স)

মো. জোবায়েদুর রহমান রানা (ব্যাডমিন্টন)

মো. ফজলুর রহমান বাবুল (সংগঠক)

শামসুল বারী (সংগঠক)

সৈয়দ শাহেদ রেজা (সংগঠক)

মো. এনায়েত হোসেন সিরাজ (সংগঠক)

২০১৫

মো, জুয়েল রানা (ফুটবল)

বরুন বিকাশ দেওয়ান (ফুটবল)

বেগম ফারহাদ জেসমীন লিটি (অ্যাথলেটিক্স)

বেগম রেহানা জামান (সাঁতার)

বেগম শিউলী আক্তার সাথী (ব্যাডমিন্টন)

খাজা রহমতউল্লাহ (মরণোত্তর) (সংগঠক)

মো. আহমেদুর রহমান (সংগঠক)

ড. শেখ আবদুস সালাম (সংগঠক)

মাহতাবুর রহমান বুলবুল (সংগঠক)

২০১৬

সুলতানা পারভীন লাভলী (অ্যাথলেটিক্স)

আরিফ খান জয় (ফুটবল)

খন্দকার রকিবুল ইসলাম (ফুটবল)

কাজী হাবিবুল বাশার (ক্রিকেট)

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (সাঁতার)

কাজল দত্ত (ভারোত্তোলন)

শামীম-আল-মামুন (ভলিবল)

মোহাম্মদ জালাল ইউনুস (সংগঠক)

মো. তোফাজ্জল হোসেন (সংগঠক)

আব্দুর রাজ্জাক (মরণোত্তর) (সংগঠক)

তাবিউর রহমান পালোয়ান (সংগঠক)

লে. ক. এ কে সরকার (অব.) (সংগঠক)

জেড. আলম (মরণোত্তর) (রেফারি)

২০১৭

আবু ইউসুফ (ফুটবল)

মো. মাহাবুব হারুন (হকি)

রহিমা খানম যুথী (অ্যাথলেটিক্স)

মো. সেলিম মিয়া (সাঁতার)

শাহরিয়া সুলতানা (ভারোত্তোলন)

ওয়াসিফ আলী (বাস্কেটবল)

আওলাদ হোসেন (সংগঠক)

শেখ বশির আহমেদ (মামুন) (সংগঠক)

আসাদুজ্জামান কোহিনুর (সংগঠক)

হাজী মো. খোরশেদ আলম (সংগঠক)

এটিএম শামসুল আলম (সংগঠক)

২০১৮

কাজী আনোয়ার হোসেন (ফুটবল)

জ্যোৎস্না আফরোজ (অ্যাথলেটিক্স)

মির রবীউজ্জামান (জিমন্যাস্টিক্স)

মো. আলমগীর আলম (হকি)

নিবেদিতা দাস (সাঁতার)

শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর (সংগঠক)

মো. রফিক উল্যা আখতার (সংগঠক )

মাহমুদুল ইসলাম রানা (সংগঠক)

মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (সংগঠক)

তৈয়েব হাসান সামছুজ্জামান (সংগঠক)

২০১৯

টুটুল কুমার নাগ (হকি)

দিপু রায় চৌধুরী (ক্রিকেট)

মাহফুজা রহমান (তানিয়া) (সাঁতার)

ফারহানা সুলতানা (শীলা) (সাইক্লিং)

মাহবুবুর রব (ব্যাডমিন্টন)

তানভীর মাজহার তান্না (সংগঠক)

কাজী নাবিল আহমেদ (সংগঠক)

ইন্তেখাবুল হামিদ (সংগঠক) অরুণ চন্দ্র চাকমা (সংগঠক)

লে. জে. মইনুল ইসলাম (অব.) (সংগঠক)

সাদিয়া আক্তার ঊর্মি (টেবিল টেনিস)

২০২০

শহিদ লে. শেখ জামাল (মরণোত্তর) (সংগঠক)

মো. মহসিন (ফুটবল)

মাহবুবুল এহসান রানা (হকি)

আবদুল্লাহ আল রাকিব (দাবা)

বেগম নিলুফা ইয়াসমিন (অ্যাথলেটিক্স)

আবদুল কাদের স্মরণ (ব্যাডমিন্টন)

আফজালুর রহমান সিনহা (ম.) (ক্রিকেট)

নাজমুল আবেদীন (ফাহিম) (সংগঠক)

তথ্য: শিশির/ আংশিক যুগান্তর

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter