করোনা: নিউইয়র্কে রোগিদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে

করোনা: নিউইয়র্কে রোগিদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে

মিলি সুলতানা, কুইন্স, নিউইয়র্ক থেকেঃ

নিউইয়র্কের বর্তমান পরিস্থিতি খুব শোচনীয়। হাসপাতাল থেকে করোনা রোগীদের বাসায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

“SAFEST” এর প্রেসিডেন্ট এবং কম্যুনিটি লিডার মাজেদা বেগম জানিয়েছেন, লং আইল্যান্ড জুইশ হাসপাতাল থেকে কে এম মনিরুল ইসলাম (৫৬), কুইন্স হাসপাতাল থেকে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সিরাজুল ইসলাম (৪৫) সাইদুর রহমান (৩৪), মাউন্ট সিনাই হাসপাতাল থেকে রিতা আকতার (৪০), এনওয়াইইউ থেকে নিলুফার ইয়াসমিনকে (৪৮) করোনা পজিটিভ থাকা সত্ত্বেও রিলিজ দেয়া হয়েছে। মুলত এরা কেউই সুস্থ হননি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ক্রিটিকাল রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে তারা বাধ্য হয়ে বহু রোগীকে ডিসচার্জ করছেন।

ভেন্টিলেটর এবং বেড খালি নাই — এই কারন দর্শিয়ে বাসায় ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। মাজেদা বেগমের বোনের স্বামী কেএম মনিরুল ইসলামের ফুসফুসে পানি এবং শ্বাসকষ্ট ধরা পড়ার পরেও ডাক্তাররা তাকে হাসপাতালে রাখেননি।

এমনিতেই নিউইয়র্কের বাসাবাড়ির পরিধি এত বড় নয় যে নির্দিষ্ট রুমে আইসোলেটেড করে রাখা যাবে। এভাবে গতকালই বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ৩১ বাঙালিকে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাসায় ফেরত এখন তারা নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে।
আক্রান্তদের সাথে তাদের পরিবারও মরবে। যারা ফেরত গেছে তাদের ভাগ্যে কি ঘটবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা জানেনা। এখানেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায় শেষ। এখন আমাদের কমনসেন্স বলে, যারা বাসায় ফেরত এসেছে এদেরকে মরতে হবে। এবং তাদের সংস্পর্শে পরিবারের যেসব সদস্য যাবে তারাও মরবে। গত একদিনেই বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ত্রিশের অধিক করোনা রোগীকে চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখেই রিলিজ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে পাঁচজন অলরেডি মারা গেছে।

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডে ব্লাসিয়ো বলেছেন, চিকিৎসার জন্যে যথাযথ সামগ্রী না থাকায় মুমুর্ষু রোগীদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। দুঃখজনকভাবে তারা নিজ ঘরে মারা যাচ্ছেন। মারা যাবার পর সিটির স্বাস্থ্য বিভাগে তাদের তথ্য লিপিবদ্ধ হচ্ছে না। গভর্নর এ্যান্ড্রু কোমো বলেছেন, নিউইয়র্কের কোন হাসপাতালেই আইসিইউ খালি না থাকায় অনেককেই বাধ্য হয়ে রিলিজ দেয়া হচ্ছে।

ভেন্টিলেটর থেকে তাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তাদের চেয়ে আরও ক্রিটিকাল রোগীকে ভেন্টিলেটেড করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা এই মানবিক কাজটি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আমরা আমাদের অসহায়ত্ব নিয়ে কষ্টে জর্জরিত। কোনো নিউইয়র্কারই স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। যারা বাসায় বন্দী আছেন তারাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবের কথা ফেডারেল সরকারকে আমরা বহু আগে ইনফর্ম করেছি। আমরা নিউইয়র্কারদের বাঁচাতে পারছিনা।

হোটেলের কোয়ারেন্টিন নিয়ে অনেকের একটা ভুল ধারণা আছে। হাসপাতালে জায়গা না থাকাতে হোটেলে কোয়ারেন্টিনে যাদেরকে যেতে হচ্ছে সেই ভাড়া সরকার পরিশোধ করবেনা। সরকার কেবল ডোমেস্টিক ভিকটিম এবং শেল্টারে থাকা ব্যক্তিদের ব্যয়ভার বহন করবে। এই দুই ক্যাটাগরির লোক ছাড়া সাধারণ মানুষ যারা হোটেলে কোয়ারেন্টিনে যাবে, হোটেলের খরচ তাদেরকেই গুণতে হবে।

-শিশির

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter