ডেঙ্গুর ওষুধ আসতে আরও একমাস!

অনলাইনঃ

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশা নিধনে নতুন ওষুধ আনার দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। ঠিক কবে নাগাদ এ ওষুধ দেশে আসবে নিশ্চিত করতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন। 

আমদানি জটিলতায় আটকে আছে ওষুধ আনার বিষয়টি। অন্তত এক মাসের আগে এ ওষুধ আসার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলেও জানিয়েছেন দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর ডেঙ্গুর ভরা মৌসুম। এ সময়ের বৃষ্টি ও তাপমাত্রা এডিস মশার বংশ বিস্তারের খুবই সহায়ক। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, ওষুধ আসতে আরো এক মাস লাগলে এ সময়ে এডিস মশার প্রজনন ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর বিস্তারও বাড়বে।

দেশ রুপান্তরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ওষুধ আনার ব্যাপারে শুক্রবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শরীফ আহমেদ বলেন, ‘কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব আনা হবে। আমরা ছুটিছাটা বাদ দিয়ে রাতদিন কাজ করছি। সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব ওষুধ আনা যায়। তবে কবে আসবে সেটার নির্দিষ্ট কোনো সময় বলতে পারব না।’

একইভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মামুনুর রহমান মামুন বলেন, ‘দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। শিপমেন্টের ব্যাপার। আমরা চাইলেও ওষুধ চলে আসবে না। সব প্রক্রিয়া শেষ করে ওষুধ আনতে হবে। সেজন্য দিনক্ষণ বলতে পারব না। তবে যত দ্রুত সম্ভব আনা যায়, সে চেষ্টা করছি।’

শুধু ওষুধের অনিশ্চয়তায় নয়, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখন দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি হাসপাতালগুলো। শয্যা সংকটের কারণে রোগীদের ফেরত পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল। বিশেষ করে ডেঙ্গু শনাক্তকরণে ‘এনএস১’ পরীক্ষার কিটের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কিটের অভাবে রাজধানীর পাশাপাশি ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু শনাক্ত করা যাচ্ছে না। ফলে রোগীদের দুর্ভোগ ও উৎকণ্ঠা চরমে পৌঁছেছে।

এই মুহূর্তে দেশের সব জেলাতেই ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব চলছে। বিশেষ করে রাজধানীতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে রোগটির প্রকোপ। আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড করে রোগটি রীতিমতো আতঙ্কে ফেলেছে গোটা দেশকে। পাশাপাশি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যাও। বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতিকে ‘মহামারীর দিকে যাচ্ছে’ বলে উল্লেখ করেছেন।

চলতি আগস্ট ও আগামী সেপ্টেম্বর মাসকে ডেঙ্গুর জন্য ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এই দুই মাসে ডেঙ্গুর বিস্তারের মৌসুম। এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টি ও নিম্ন তাপমাত্রা ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার বংশ বিস্তারের জন্য উর্বর মৌসুম। বিগত জুন-জুলাইয়ের তুলনায় এই দুই মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ ব্যাপারে রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘এই দুই মাস বৃষ্টি ও তাপমাত্রা এডিস মশার বংশ বিস্তারের উপযুক্ত সময়। বর্ষার পর থেমে থেমে বৃষ্টি হলে এডিসের লার্ভা থেকে দ্রুত ও বেশিহারে এডিস মশা জন্ম নেয়।’ এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশা নিধন ও এডিসের লার্ভা ধ্বংসের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ববিদরা।

একইভাবে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) পরামর্শক ও আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘চলতি আগস্ট মাসে রাজধানীসহ সারা দেশে এডিস মশার প্রকোপ আরও বাড়বে। সাধারণত ভারী বৃষ্টিপাত হলে স্বচ্ছ পানিতে জন্ম নেওয়া এডিস মশার লার্ভা ধুয়ে যায় ও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে। কিন্তু এবার সে লক্ষণ নেই।’ আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ মাসে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম।

ফলে ওষুধ ছিটিয়ে এডিস মশা নিধন ও লার্ভা ধ্বংস করা ছাড়া ডেঙ্গু মোকাবিলা করা যাবে না বলে মত দিয়েছেন এই দুই রোগতত্ত্ববিদ। তারা দুজনই মত দেন, এ বছর ডেঙ্গুর ধরন পাল্টে যাওয়ায় মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আর বাড়বে কি না সেটা নির্ভর করবে সিটি করপোরেশন এডিস মশা নিধনের কতটুকু কার্যকর ভূমিকা নেয় তার ওপর। এবার কার্যকর ওষুধ ছাড়া এডিস মশা নিধন কঠিন হবে।

গত বৃহস্পতিবার আদালতে তিন দফা শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত হয় দুই সিটি করপোরেশন এডিস মশা মারার ওষুধ আনবে। তাদের ওষুধ আনতে ও এডিস মশা নিধনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুই সিটি করপোরেশন সমন্বয় করে কাজ করবে। আদালত ‘জি টু জি’ পদ্ধতিতে চুক্তি করে দ্রুত ওষুধ আনার পরামর্শ দেন। গত বৃহস্পতি ও গতকাল শুক্রবার এ নিয়ে আরও কয়েক দফা বৈঠক করে দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওষুধ আনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ ঠিক করতে পারেনি। এমনকি কবে নাগাদ এ ওষুধ আসবে, তাও বলতে পারছেন না করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

ওষুধ আনতে দেরি হচ্ছে কেন জানতে চাইলে দুই সিটি করপোরেশনের দুই কর্মকর্তা বলেন, মূল কারণ ওষুধ আমদানির দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। তারা জানান, দুই সিটি করপোরেশন ওষুধ কিনবে। এর জন্য তারা তিনটি ওষুধের নাম প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে। নামগুলো প্রথমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংকে দেবে। উইং পেস্টিসাইড আমদানির জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের যে প্রতিষ্ঠানটি ওষুধ প্রস্তুত করে, সে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে। অর্থাৎ ওই কোম্পানি প্রিন্সিপাল অথার। এরপর যে ওষুধের নাম প্রস্তাব করা হয়, সে ওষুধ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিবন্ধিত কি না, তা যাচাই-বাছাই করে। পরে যে কোম্পানি থেকে ওষুধ আনা হবে, সে কোম্পানিকে রেজিস্ট্রেশন দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ওই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে। এসব প্রক্রিয়া শেষ হলে ওষুধের নমুনা আনা হয়। নমুনা প্রথমে দেশের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংকে দেয় পরীক্ষার জন্য। উইং ওষুধটির টেকনিক্যাল দিক পরীক্ষা করে, অর্থাৎ উপাদান ঠিক আছে কি না, তা দেখে। পরে নমুনা দেওয়া হয় আইইডিসিআরে। আইইডিসিআর নমুনা সরকারের দুই পেস্টিসাইড টেকনিক্যাল কমিটিকে দেয়। কমিটির যাচাই-বাছাই করে। তারা পরীক্ষার পর নমুনা যাবে আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরিতে। সেখানে মানোত্তীর্ণ হলে সরকার কেনার উদ্যোগ নেবে। এ ক্ষেত্রে দুভাবে কেনা যেতে পারে সরাসরি সরকারি তত্ত্বাবধানে বা কোনো কোম্পানিকে দিয়ে।

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter