উম্মে আঁখি’’র সংগৃহিত
“দেশের টাকা লুটে ফেলছে সরকারি লোকজন।” – অভিযোগটা নতুন না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটা সরকারের আমলেই এমনটা ঘটে এসেছে।

এখন আমাদের (জনগনের) সমস্যা হচ্ছে, আমরা সবাই “দেশান্ধ” হবার বদলে “দলান্ধ” হয়ে গেছি। আপনি আওয়ামীলীগ সরকারের দুর্বল পয়েন্ট ধরতে গিয়ে অভিযোগ করেন হলমার্ক, বাংলাদেশ ব্যাংক, বা শেয়ার মার্কেট ইত্যাদি হাইলাইট করার চেষ্টা করলেই আপনাকে দলান্ধরা ট্যাগ দেয়া শুরু করবে। আপনাকে জামাত শিবিরের পেইড এজেন্ট বানিয়ে বিগত সরকারের আমলের যাবতীয় দুর্নীতির লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলবে, “তখন বলেননি কেন?”

এইসব ফাইজলামির উত্তর হতে পারে, “ইয়ে মানে, তখন ফেসবুক ছিল না তাই বলা হয়নি।”

আর যদি সিরিয়াসলি বলতে হয়, তবে বলবো, “আগের সরকার গু খেয়েছে বলে গু খাওয়া জায়েজ হয়ে যাবে?”

ভাই, যদি সত্যিই দেশের জন্য ভাল কিছু চান, নিজের দলের জন্যও ভাল কিছু চান, তাহলে সবার আগে দুর্বলতাগুলো একনলেজ করুন। সাহস করে বলুন, “জ্বি ভাই, এইসব দুর্নীতি আমাদের কলঙ্কিত করেছে। তবে আপনাদের আশ্বস্ত করছি – আমরা অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। ঐ কৃষকের টাকা, ঐ মজুরের টাকা, ঐ দরিদ্র শ্রমজীবীর টাকা মার যেতে দেব না।”

শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিখ্যাত ভাষণে এটাই বলা হয়েছিল। আমরা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার “সাব” হই দেশের টাকায়। এবং দেশের টাকা মানে ঐ ৮০% দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টাকা।

একই যুক্তি সাগর রুনি, তনু, ব্লগার, জুলহাস-তনয় বা এইরকম আলোচিত সব হত্যাকাণ্ডের বেলাতেও প্রযোজ্য। এসবকে জাস্টিফাই করতে আপনি যদি ছাত্রলীগের কর্মীদের উপর ব্রাশ ফায়ার, বা শিক্ষক গোপাল মুহুরীর হত্যা টেনে আনেন, তাহলে ভুল। দুইটাই অপরাধ। একটার জাস্টিফিকেশনে অন্যটা না টেনে দুইটারই বিচারের দাবি করুন। অ্যামেরিকায় মার্ডার কেসে সামান্য সিগারেটের ফিল্টার, দোকানের রিসিট বা ইত্যাদি থেকে খুনি ধরে ফেলে। এর মানে কী আমাদের দেশের গোয়েন্দা বিভাগে গরু ছাগলেরা কাজ করে? জ্বি না। মেধার বিচারে আমরা অনেক জাতি থেকেই এগিয়ে। কিন্তু তাঁদের হাত বাধা থাকে।

আমাদের দেশে প্রকাশ্য দিবালোকে, শয়ে শয়ে মানুষের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হলেও প্রথমে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তারপর বছরের পর বছর ধরে সেই কেস চলতে থাকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, “কারোর বেডরুমতো আমরা পাহারা দিতে পারিনা,” অথবা, “আমার ধর্ম নিয়ে উল্টা পাল্টা লিখবে কেন সে?” – তখন হতাশায় কাঁধটা ঝুলে যায়। হ্যা আসলেই কারোর বেডরুম পাহারা দেয়া সম্ভব না। এবং কারোর ধর্ম নিয়ে আক্রমণাত্মক কথা লেখা উচিৎ না। তবে যাই ঘটুক না কেন, আইনকে নিজের হাতে তোলার কোন যুক্তি হতে পারেনা। সেক্ষেত্রে সরকার প্রধানের বয়ান হওয়া উচিৎ ছিল, যা সাহায্য লাগে আমরা দেব, তোমরা দ্রুত কেস সল্ভ করো।

কিছুদিন আগে স্টুডেন্টরা বিদ্রোহ করে রাস্তায় নেমেছিল। তাঁরা অহিংসবাদী ছিল। তাঁরা নিশ্চিত করছিল কেউ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাতে পারবে না। মিডিয়ার গাড়ি তাঁরা জব্দ করেছিল। তাঁরা নিশ্চিত করেছিল রংওয়ে দিয়ে কেউ ফাজিলের মতন গাড়ি চালাতে পারবে না। তাঁরা মন্ত্রীর গাড়ি পর্যন্ত ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তাঁরা নিশ্চিত করেছিল এম্বুলেন্সকে ভিড়ের রাস্তায় যেন অপেক্ষা করতে না হয়। তাঁরা চমৎকারভাবে রাস্তা বের করে দিচ্ছিল। যৌক্তিক দাবি। কিন্তু কী হলো শেষ পর্যন্ত? লুঙ্গি পরা লাঠিয়াল বাহিনী পুলিশের সাথে রাস্তায় নেমে ওদের পেটালো। এই এক শাহজাহান খানের হাতে জিম্মি সরকার কিচ্ছু করতে পারলো না। আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত হলে পুলিশ সবার আগে দুর্নীতিবাজ মতলববাজ গডফাদারদের জেলে ঢুকাতো। বাসের নিচে চাপা পড়ে মরতো না কোন শিক্ষার্থী। ছাত্রদেরও রাস্তায় নেমে আসতে হতো না।

তেমনিভাবে খাদ্যে ভেজাল, রাস্তাঘাট বেদখল থেকে শুরু করে কোন কিছু নিয়েই আমাদের চিন্তা থাকতো না। সিলেটের বিছনা কান্দিতে আমাদের বেশ কিছু জমি বেদখল হয়েছে। টাকার হিসাব ধরলে কোটি টাকার উপর দাম। স্থানীয় ক্ষমতাবানরা (দলের নাম বললে আবার ট্যাগ খেতে হবে, তাই বললাম না) কাজটা করেছে। এবং আমরা মোটামুটি ধরেই নিয়েছি ওটা আর উদ্ধার হবেনা। উল্টা উদ্ধার করতে গেলে খুন হবার সম্ভাবনাও আছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এমনটা হবে? এই ব্যাপারে আমাদের দলকানাদের বক্তব্য কী? আমাদের বাবাদের কামাই করা টাকা কষ্টের না?

নির্বাচনের মৌসুম চলছে। একদলের সাংসদ প্রকাশ্যে নিজের এলাকায় ঘোষণা দিল “নৌকা ছাড়া অন্য কোথাও ভোট দিতে চাইলে কেন্দ্রে যাবার প্রয়োজন নেই। নাহলে দেখে নেব।”

আপনার এলাকায় ভোট দেয়ার সময় দলের উর্দ্ধে গিয়ে মানুষ বুঝে ভোট দেয়ার চেষ্টা করুন। আমার পছন্দ ধানের শীষ, তাই বলে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে ভোট দিয়ে দিলাম, এইটা কোন কাজের কথা না। তেমনি, আমার পছন্দ আওয়ামীলীগ, কিন্তু প্রকাশ্যে গুন্ডামি করে বেড়ানো লোককে ভোট দিয়ে দিলে ওর কুকর্মের দায় আমার কাঁধেই বর্তাবে। দুই একটা সিট হারালে আপনার পছন্দের দলের কোন সমস্যা হবেনা। বরং একটি বার্তা তাঁরা পাবেন যে নির্বাচনের সময়ে প্রার্থী নমিনেট করার সময়ে বাজে প্রার্থী নমিনেট করা যাবেনা।

আমাদেরও উচিৎ এই ব্যাপারটা মাথায় রাখা। সরকার গঠন করতে চাও? তাহলে আমাদের দাবি মেনে নাও। কারন আমরা পাবলিক, আমাদের ভোটেই তোমরা “মন্ত্রী সাব” “এমপি সাব”।

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily