পল্লবীর আলোচিত ৩ বান্ধবী উধাও ঘটনায় সন্দেহভাজন ঘিরে পুলিশের তদন্ত

দিলখুশ জান্নাত নিসা, কানিজ ফাতেমা ও স্নেহা আক্তার

ইউসুফ আহমেদ, পল্লবী থেকেঃ

পল্লবীর ৩ বান্ধবী উধাও হওয়ার ঘটনার পিছনে দুইটি সন্দেহ নিয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। উধাও হওয়ার ঘটনার পিছনে প্রেম সম্পর্কিত কোন কারণ নেই বলে পুলিশ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

পুলিশের তদন্ত মূলতঃ পাচার হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করলেও, পুলিশের সন্দেহে জঙ্গিবাদে জড়িত হওয়ার
সন্দেহও রয়েছে।

রাজধানীর পল্লবীতে কলেজ পড়ুয়া তিন বান্ধবী বাসা থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, স্কুল সার্টিফিকেট ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। পরিবারের সদস্যরা তাদের খুঁজে পাচ্ছেন না।

এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ হয়েছে। উধাও হওয়া তিন তরুণীর মাঝে জান্নাত নিসা নগদ ৬ লাখ টাকা, কানিজ ফাতেমা আড়াই ভরি গহনা, স্নেহা নগদ ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে যায় বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

পরিবারের দাবি— বিদেশে নেওয়ার প্রলোভনে তাদেরকে নিয়ে গেছে একটি নারী পাচারকারী চক্র। এ জন্য তারা বাসা থেকে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়েছে। নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থী হলেন— কাজী দিলখুশ জান্নাত নিসা, কানিজ ফাতেমা ও স্নেহা আক্তার। তারা সবাই দ্বাদশ শ্রেণির  শিক্ষার্থী।

এর মধ্যে নিসা মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, স্নেহা পল্লবী ডিগ্রি কলেজ ও কানিজ দুয়ারিপাড়া কলেজের শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় নিসার মা মাহমুদা আক্তার শুক্রবার পল্লবী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে যাদের বিবাদী করা হয়েছে, তারা হলেন— তরিকুল, রকিবুল ও জিনিয়া। এর মধ্যে জিনিয়া টিকটকের পরিচিত মুখ। আর তরিকুল ও রকিবুল সহোদর।

অভিযোগে মাহমুদা জানান, তার মেয়ে নিসা ও তার দুই বান্ধবী কানিজ ফাতেমা ও স্নেহাকে বিদেশে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘরছাড়া করেছে একটি নারী পাচারকারী চক্র। পরিবারের কাউকে কিছু না বলে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল  ৯টায় সবাই নিজ নিজ বাসা থেকে একযোগে বের হয়। বের হওয়ার সময় সবাই বাসা থেকে কয়েক লাখ টাকা, গহনা, স্কুল সার্টিফিকেট ও দামি মোবাইল নিয়ে গেছে।

জান্নাতের বড় বোন আইনজীবী কাজী রওশন দিল আফরোজ বলেন, আমার বোন ও তার বান্ধবীদের বিদেশে নেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়েছে। এ জন্য তারা গতকাল প্ল্যানিং করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। গতকাল সকালে সবাই কলেজের পোশাক পরে বের হয়েছে। সবার কাঁধে কলেজের ব্যাগ ছিল। তাদের মহল্লার প্রতিবেশী
তরিকুল, রকিবুল ও জিনিয়া এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন তিনি।

রওশন আরও বলেন, তরিকুল আমার বোনের সঙ্গে প্রায় সময় কথা বলত। তরিকুল তাকে (নিসা) বলত— সে অনেক বড় হ্যাকার। আর অনেক বড় কোম্পানির মালিক। আমেরিকায় লোক পাঠায়। আমার বোন নিসা বাসায় এসে আমাকে প্রায় সময় বলত— ‘আপু তরিকুল তোমাকে তার কোম্পানির লিগ্যাল অ্যাডভাইজার পদে চাকরি দেবে’। এই আইনজীবী বলেন, ঘটনার পর আমরা তরিকুলের বাসায় গিয়ে জানতে পারি, সে ও তার বড় ভাই রকিবুল গতকাল থেকেই বাসায় নেই। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

রওশন বলেন, জিনিয়া নামে তরিকুলের এক টিকটক বান্ধবী রয়েছে। জিনিয়া আমার ছোট বোন ও তার বান্ধবীদেরও পরিচিত। গতকাল জিনিয়ার বাসায় গিয়েছিলাম ওদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে। কিন্তু জিনিয়া দেখা করেনি। তার পরিবারের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে।

‘আমরা আশঙ্কা করছি— তরিকুল ও জিনিয়ার পরিবার এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা জানে আমার বোন ও তার বান্ধবীরা কোথায় আছে।’ পুলিশ ইতিমধ্যে তরিকুল ও রকিবুলকে আটক করেছে। এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অয়ন নামে এক যুবককেও থানায় নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে উধাও হওয়ার ঘটনার সাথে প্রেস সম্পর্কিত কোন কিছু নেই। তিন বান্ধবীকে হয় পাচারচক্রের হাতে রয়েছে, নয়তো জঙ্গি গোষ্টিতে যোগদানের জন্য নিজেরা বের হয়ে গেছে।

পল্লবী থানার এসআই সজিব খান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযোগে উল্লেখিত দুইজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অয়ন নামে যুবককে থানায় আনা হয়েছে।

-শিশির

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter