ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, ১ দিনে ৪৭৩ রোগী

স্বাস্থ্যঃ

ক্রমেই বাড়ছে মশার উপদ্রব। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন মশা মারার কার্যক্রমে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাদের ওষুধে কাজ হচ্ছে না, কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না। এতে অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে ডেঙ্গু জ্বর। দিন দিন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

গতকাল মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে এক দিনে রেকর্ড সংখ্যক ৪৭৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৬৯ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা তিন-চারগুণ বেশি। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে মশা মারার কাজে মনযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে চিকিত্সকরা বলেন, জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে।

তাই এডিস মশার বংশবিস্তার ধ্বংস করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সাধারণত প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবর এই চার মাস ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোশ বেশি থাকে। তাই ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় এডিস মশা নিধনে আগে থেকেই দুই সিটি করপোরেশনের প্রস্তুতি থাকার কথা। কিন্তু তারা কাজের কাজ কিছুই করেনি। যখনই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হয় তখনই তাদের টনক নড়ে।

এদিকে, এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় গতকাল ১০টি ভবনের মালিককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, গতকাল ৪৭৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৯৯ জন, মিটফোর্ড হাসপাতলে ৫২ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৬, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতলে ৪৩ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ছয় জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত দুই বছর ১০ মাস বয়সের শিশু তাজভীরকে চব্বিশ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে হঠাত্ করেই বমি শুরু হয় শিশুটির। সঙ্গে অল্প জ্বর ও পেট ব্যথা। সাপোজিটার দেওয়ার পরেও ক্রমাগত বমি করতে থাকে শিশুটি। হাসপাতালে নিয়ে টেস্ট করানোর পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে শিশুটির। প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে তাজভীর চার দিন চিকিত্সাধীন থাকার পরও অবস্থার উন্নতি না দেখে তাকে দ্রুত ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। চিকিত্সকরা জানিয়েছেন চব্বিশ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পর পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। অথচ শুরুতে ডেঙ্গুর বিষয়টি বোঝাই যায়নি বলে জানান শিশুর বাবা-মা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গুর গতানুগতিক লক্ষণের থেকে এবারের লক্ষণগুলো ব্যতিক্রম। আগে ডেঙ্গুর লক্ষণ ছিল জ্বর আর মাথাব্যথা। চোখের পেছনে ব্যথা হতো। তবে এবারের লক্ষণগুলো অন্যরকম।

এবারে কারো তীব্র পেটব্যথা হচ্ছে, কারও হার্টের সমস্যা বেড়েছে। কারও ব্রেইনে এফেক্ট করছে, লিভার বড় হয়ে যাচ্ছে বা পানি জমে যাচ্ছে। অন্যান্য বছরের চাইতে এবারে এই জটিলতাগুলো অনেক বেশি। তাই অভিভাবকরা বুঝে ওঠার আগেই অনেক সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকদের বিচলিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, তরল খাবার ও প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিতে হবে।

-কেএম

Print Friendly, PDF & Email
FacebookTwitter